ক্রীড়া ডেস্ক

  ০৭ জানুয়ারি, ২০২৪

ব্রাজিলের কিংবদন্তি মারিও জাগালোর চিরবিদায়

ফুটবলার ও কোচ, দুই ভূমিকায় মাঠ রাঙানো মারিও জাগালো বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। গতকাল শনিবার তার ইনস্টাগ্রাম পাতা থেকে নিশ্চিত করা হয় মৃত্যুর খবর। ব্রাজিলের কিংবদন্তি এ ফুটবল ব্যক্তিত্বের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলে খেলেছেন এ লেফট উইঙ্গার। ফাইনালে নিজে গোল করার পাশাপাশি বানিয়ে দিয়েছেন পেলের গোল। পরের বিশ্বকাপে শিরোপা ধরে রাখা দলেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তিনি।

১৯৭০ সালে তার কোচিংয়েই ব্রাজিল জেতে আরেকটি শিরোপা। পেলে, জাইরজিনিয়ো, রিভেলিনো, তোস্তাওদের সে দলকে মনে করা হয় ফুটবল ইতিহাসের সেরা দল। ফুটবলার ও কোচ, দুই ভূমিকায় বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের ইতিহাস রচনা হয় তার হাত ধরেই। পরে ২৪ বছরের খরা ঘুচিয়ে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে শিরোপাজয়ী ব্রাজিল দলের সহকারী কোচ ছিলেন জাগালো। এছাড়া ১৯৭৪ বিশ্বকাপে তার কোচিংয়ে চতুর্থ হয় ব্রাজিল, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে তার কোচিংয়ে হয় রানার্স আপ। ২০০৬ বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন ব্রাজিলের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। এমনকি ১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালেও তিনি মাঠে ছিলেন। তবে সেবার ভিন্ন ভূমিকায়, নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে।

১৯৯২ সালে ‘ফিফা অর্ডার অব মেরিট’ সম্মাননা পান তিনি, বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রন সংস্থাটির সর্বোচ্চ খেতাব যা। ২০১৩ সালে ওয়ার্ল্ড সকার ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে তাকে মনোনীত করা হয় সর্বকালের নবম সেরা কোচ হিসেবে। নামের অংশ থেকে মিলিয়ে তাকে ডাকা হতো ‘ওল্ড উল্ফ’ নামে। তবে কোচ হিসেবে তার দুর্দান্ত ট্যাকটিকস, টেকনিক্যাল জ্ঞান ও ডাগআউটে ব্যক্তিত্বময় উপস্থিতির কারণে ফুটবলারদের কাছে তার পরিচিতি ছিল ‘দ্য প্রফেসর’ নামে।

ফুটবল মাঠে কীর্তির কারণে তিনি তুমুল জনপ্রিয় তো ছিলেনই, তবে ব্রাজিলিয়ানরা তাকে ভালোবাসত ও লালন করত তার স্বকীয় ব্যক্তিত্ব ও আপসহীন দেশপ্রেমের কারণে। তিনি সবসময় বলতেন, তার জন্মই হয়েছে জয়ের জন্য। কখনো তিনি ছিলেন খেয়ালি, কখনো মেজাজি। নিজেকে আলাদা করে ফুটিয়ে তুলেছেন সবসময়ই। এতেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন আদর্শ একজন। ১৯৩১ সালের ৯ আগস্ট তার জন্ম ব্রাজিলের উত্তরপূর্বাঞ্চলের দরিদ্র উপকূলীয় এলাকা আতালালিয়ার মাসেইয়োতে। পুরো নাম মারিও জর্জে লোবো জাগালো। ‘লোবো’ শব্দের অর্থ ‘উল্ফ’, সেখান থেকেই এসেছে তার ‘ওল্ড উল্ফ’ ডাক নামটি। তার শৈশবের স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়ার। তবে চোখের সমস্যার কারণে সেই স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয় তাকে। পরে হিসাবরক্ষণ নিয়ে পড়াশোনা করেন, পাশাপাশি ফাঁকা সময়ে ফুটবল খেলতেন। সেভাবে খেলেই একসময় জায়গা করে নেন তার শহরের সবচেয়ে বড় ক্লাবে। তিনি অনেকবারই বলেছেন, তার জীবনে ফুটবল এসেছে দুর্ঘটনাক্রমে।

পরিবারের বাধা পেরিয়ে, নানা পথ মাড়িয়ে একসময় তিনি ফুটবলারই হয়ে ওঠেন। নাম লেখান ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় ক্লাবগুলোর একটি ফ্লামেঙ্গোতে। এই দলের হয়ে রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন তিন বার। ক্যারিয়ারের পরের ভাগে তিনি পাড়ি জমান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব বতাফোগোয়। সেখানেও জেতেন দুটি রাজ্য শিরোপা। ছোটখোটো গড়নের ছিলেন তিনি। শারীরিক ঘাটতি পুষিয়ে দিতেন ট্যাকটিক্যাল মেধা দিয়ে। আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণেও দারুণ ভূমিকা রাখতেন বলে কোচের কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলেছিলেন নিজেকে। নানা সময়ে ক্লাবের হয়ে মূল স্ট্রাইকার, ইনসাইড ফরোয়ার্ড হিসেবেও খেলেছেন তিনি। ১৯৫৮ বিশ্বকাপকে পেলের উত্থানের আসর হিসেবে ধরা হলেও ব্রাজিলের জয়ে জাগালোরও ছিল যথেষ্ট অবদান। ১৯৬২ বিশ্বকাপে সব ম্যাচে প্রতিটি মিনিট খেলেন তিনি। সেবার দলের কৌশলে পরিবর্তন আনা হয় জাগালোকে দিয়েই। অনেকটাই নিচে নেমে প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়ায় সহায়তা করতেন তিনি, এরপর গুলির বেগে উঠে যেতেন আক্রমণে। বলা হয়, ফরোয়ার্ডদের রক্ষণে নেমে সহায়তা করার ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে চালু হয়েছিল তার মাধ্যমেই। ব্রাজিলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেন তিনি ১৯৬৪ সালে। পরের বছর বিদায় নেন ক্লাব ফুটবল থেকেও। এর পরের বছরই কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন বতাফোগোর হয়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close