ক্রীড়া ডেস্ক

  ২৬ মে, ২০২২

‘আমি নারী বারবার প্রমাণ করতে হয়েছে’

বারবার নারীত্বের প্রমাণ দিতে হয়েছে সেমেনিয়াকে। বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স সংস্থার নির্দেশে করাতে হয়েছে বিশেষ চিকিৎসা। একাধিক তিক্ত অভিজ্ঞতা তার।

কাসটার সেমেনিয়া। নামের পাশে দুটি অলিম্পিক্স সোনা, তিনটি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের সোনা। মাঝারি পাল্লার দৌড়ে এক সময় ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা নারী। কিন্তু নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করার আগে প্রমাণ করতে হয়েছে নারীত্ব। একবার নয়, বারবার। আরো একবার নিজের সেই যন্ত্রণার কথা বললেন সেমেনিয়া।

জুনিয়র থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত তাকে দিতে হয়েছে নারীত্বের পরীক্ষা। তেমনই এক তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন সেমেনিয়া। তখন তার বয়স ১৮। ২০০৯ সালে একটি প্রতিযোগিতায় ৮০০ মিটার দৌড়ে বড় ব্যবধানে জেতেন সেমেনিয়া। তার দৌড় শেষ করার সময় দেখে চমকে যান প্রতিযোগিতার বিচারকরাও। সেই চমকই কাল হয় দক্ষিণ আফ্রিকার এই অ্যাথলিটের কাছে। তার শারীরিক গঠন দেখে সন্দেহ তৈরি হয় বিচারকদের মধ্যে। শুরু হয় নিজেকে মহিলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই। তাকে নারীত্বের পরীক্ষা দিতে বলে অ্যাথলেটিক্সের বিশ্ব সংস্থা। তারপরই তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ৩১ বছরের অ্যাথলিট এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ওদের মনে হয়েছিল আমি মহিলা নই। আমার সম্ভবত পুরুষাঙ্গ রয়েছে। বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না তারা। ওদের বলেছিলাম, আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি মহিলা। আপনারা চাইলে নিজেকে নারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারি। দেহ দেখাতেও তৈরি ছিলাম। ওদের বলেছিলাম, আমার সবকিছু দেখাতেও সমস্যা নেই।’

বারবার নারীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়েছে সেমেনিয়াকে। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তার শরীরে ডিম্বাশয় বা জরায়ুর অস্তিত্ব নেই। তার শরীরে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের প্রভাব সাধারণ মহিলাদের থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি। এর ফলে তার পেশির গঠন এবং শক্তি খানিকটা পুরুষদের মতো।

শরীরে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণের পরিমাণ কমানোর জন্য ২০১১ সালে তাকে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের নির্দেশে ওষুধ খেতে হয়। সেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথাও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সেমেনিয়া। তিনি বলেছেন, ‘সেই ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। ওজন বাড়তে শুরু করে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। মনে হতো, যে কোনো সময় হৃদ?রোগে আক্রান্ত হতে পারি। সেটা অনেকটা নিজেকে প্রতিদিন ছুরি দিয়ে কোপানোর মতো ছিল। অথচ আমার কাছে অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। আমি শুধু দৌড়তে চাইতাম। ১৮ বছর বয়সেই ঠিক করে নিয়েছিলাম অলিম্পিক্সে পদক জিততেই হবে। এটাই আমার একমাত্র পথ ছিল।’

কিন্তু বাস্তব সত্যিটা হলো, যত পদক জিতেছেন, তত তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তত যন্ত্রণা বেড়েছে সেমেনিয়ার। সেই যন্ত্রণাই আরো একবার বেরিয়ে এলো তার কথায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close