মুহিব্বুল্লাহ কাফি

  ০৬ এপ্রিল, ২০২৪

মুহিতের ঈদানন্দ

আম্মু আমার আতরটা কোথায়! বলে জোরে হাঁকল মুহিত। রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এসে আতরটা বের করে দিলেন মুহিতের মা। মুহিত আজ নতুন পাঞ্জাবি পরেছে। কারণ, আজ যে ঈদ। মুহিত সেই আতর পাঞ্জাবিতে মাখল। বেশ আনন্দে।

গত শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিল মুহিত তার বাবার সঙ্গে মসজিদে। খতিব সাহেব ঈদের দিন ঈদগাহে আসার আগে কিছু সুন্নতের কথা বলেছিলেন। মুহিত সব মনে রাখতে পারেনি। তবে, আতর ও মিষ্টিজাতীয় কিছু খাওয়ার কথা মনেছিল তার। তাই মুহিত জুমা শেষে বাবার থেকে টাকা নিয়ে মসজিদের পাশে বসে থাকা আতরওয়ালা থেকে ছোট্ট একটা আতরের শিশি কিনেছিল।

ছোট্ট মুহিত এবার ক্লাস টুতে পড়ে। দেখতে খুব মিষ্টিমুখ তার। মায়াবী চোহারা। যে দেখবে সেই মুহিতের দুগাল টেনে দিয়ে উ..লু..লু..লু বলতে মন চাইবে। মুহিত কথাও বলে পাকাণ্ডপাকা। তার কথা শুনে মাঝেমধ্যে থ হয়ে যেতে হয়। বয়সের তুলনায় তার কথা বেশ গুছানো।

এক দিন তো মুহিত তার বাবাকে বলেই বসল, আচ্ছা বাবা, তুমি কি বোকা?

বাবা তখন সিগারেট ফুঁকছিলেন। আচমকা ছোট্ট মুহিতের অমন কথা শুনে সত্যি সত্যি বোকা বনে যান তিনি। নিজেকে স্বাভাবিক করে বাবা প্রশ্ন করলেন, আমাকে কি তোমার বোকা মনে হয়! মুহিতও স্বাভাবিকভাবে জবাব দিল, জি বাবা। তুমি বোকা।

এবার বাবা কিছুটা রেগে বললেন, আমাকে তোমার কেন বোকা মনে হয়!

মুহিত সিগারেটের খোলের দিকে আঙুল উঠিয়ে বলল, এখানে যে বাবুটা দেখছো তার ক্ষতি হয়। তোমার খাওয়া সিগারেটের ধোঁয়ায়। আজ আমাদের বাংলা স্যার বলেছেন, যারা সিগারেট খায় তারা বোকা। আর তুমি সিগারেট খাও তাই তুমিও বোকা। মুহিতের অমন ছোট্ট মুখে বোকা হওয়ার ব্যাখ্যা শুনে বাবা চুপ মেরে গেলেন। বাবা আধ-সিগারেটটা নিভিয়ে মুহিতকে কাছে টেনে আদর করলেন। আর মুচকি হেসে বললেন, ঠিক আছে বাবা, আমি এখন থেকে সিগারেট না খাওয়ার চেষ্টা করব।

সে যাই হোক, আজ মুহিত সবার আগে উঠেছে। সবার আগে সে গোসলও সেরে ফেলেছে। গত জুমা শেষে কিনে আনা আতর মায়ের থেকে নিয়ে জামাতেও মেখে ফেলেছে মুহিত। আরেকটু সকাল হতেই মুহিতের কানে মসজিদের মাইক থেকে ভেসে এলো, ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক।

আর মুহিত-ও মা ঈদ মোবারক! মা ঈদ মোবারক! মা ঈদ মোবারক! বলে বলে লাফাতে গালল। মুহিতের লাফালাফি দেখে আনন্দের ঢেউ খেলে গেল মুহিতের মায়ের ঠোঁটে। তিনি বলে উঠলেন, তোমাকেও ঈদ মোবারক আমার সোনামণি!

কিছুক্ষণ পর ফের মসজিদের মাইক থেকে বেজে উঠল, ও মোর রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ...। এ বাসা ও বাসা থেকে, ও মোর রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ... এ গজলটা বাজতে লাগল। আর একটু পরপর মোয়াজ্জিন সাহেব- ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক বলে ঈদের নামাজের সময় বলে দিচ্ছিলেন। শহরতলিতে যা হয় আর-কি।

গেল মুহিত তার বাবার সঙ্গে ঈদগাহে। ঈদের নামাজ আদায় করতে। মায়ের রেঁধে দেওয়া সেমাই খেয়ে। মুহিত তার বাবার সঙ্গে বসে ঈদের বয়ান শুনছে আর একটু পরপর ইমাম সাহেবের সঙ্গে সঙ্গে তাকবির দিচ্ছে।

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া-লিল্লাহিল হামদ।

মুহিত পুরো তাকবির দিতে পারছে না। শুরুতে ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’- বলে বাকিটুকু ইমাম সাহেবের সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট নাড়িয়ে-নাড়িয়ে বলতে লাগল। মুহিতের তাকবির দিতে খুব ভালো লাগছে। দিচ্ছেও আনন্দে ও উৎফুল্লে। হঠাৎ মুহিত লক্ষ করল তার বাঁ পাশে গতকাল সন্ধ্যাবেলার সেই অন্ধ-বৃদ্ধ লোকটা বসে আছেন। যে লোকটাকে মুহিত হাতে ধরে মসজিদ দিয়ে এসেছিল।

গতকাল মাগরিবের সময় তথা, চাঁদরাতে মসজিদের মাইক থেকে ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক- আজ চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ঈদুল ফিতর। চাঁদ দেখার এই সংবাদ যখন মসজিদের মাইক থেকে এলো তখন মুহিত দৌড়ে মসজিদে আসতে লাগল চাঁদ দেখার জন্য। শুধু কি মুহিত একা! বলতে গেলে মহল্লার সব ছেলেপুলে মসজিদের মাঠে আসতে লাগল চাঁদ দেখার জন্য। মসজিদের মাঠ থেকে চাঁদ দেখা না গেলেও ছোট বাচ্চারা মসজিদের মাঠে একত্র হবে হই-হুল্লোড় করার জন্য। তারা চাঁদ দেখুক বা না দেখুক, ঈদ মোবারক বলে বলে খুশিতে নাচানাচি করে। মুহিত যেই মসজিদের মেইন গেট দিয়ে মাঠে ঢুকবে, তখনই মুহিতের চোখ আটকে গেল। ও থমকে দাঁড়াল। দেখল এক অন্ধ-বৃদ্ধলোক মসজিদের গেট খুঁজে না পেয়ে দেয়ালে মাথা ঠুকছেন। মুহিত এগিয়ে গিয়ে ওই অন্ধ-বৃদ্ধকে মসজিদের ভেতর হাত ধরে নিয়ে

গেল। লোকটি মুহিতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আর মুচকি হেসে বললেন, ঈদ

মোবারক তোমাকে দাদু! আপনাকেও ঈদ মোবারক, বলে চাঁদ দেখার জন্য দৌড়ে হিড়িক পড়া ছেলেপুলেদের মধ্যে ঢুকে গেল ছোট্ট মুহিত।

আজ ঈদগাহে ওই অন্ধ-বৃদ্ধলোকটাকে তার পাশে বসতে দেখে মুহিতের ঈদানন্দ যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। মুহিত আবারও ইমাম সাহেবের সঙ্গে বলতে লাগল, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া-লিল্লাহিল হামদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close