শাহীন সুলতানা

  ০৯ মার্চ, ২০২৪

আরাফের বেড়ালছানা

বছরখানেক আগের কথা। আরাফ বায়না করল... বেড়াল পুষবে। কিন্তু মা কিছুতেই রাজি হন না। কারণ বেড়াল পুষলে যখন-তখন হাঁড়ির মাছ চুরি করে খেয়ে ফেলবে, খাবারে মুখ লাগিয়ে দেবে, কখনোবা পাতিলের দুধ খেয়ে ফেলবে ইত্যাদি বাড়তি ঝামেলা।

আরাফের ছোট্ট মন কিছুতেই সে কথা বুঝে না। বেড়ালছানার জন্য তার ভীষণ রকম মায়া লাগে। কেমন যেন আদুরে চেহারা ওদের। চোখে মুখে মায়া জড়ানো। কোথাও বেড়াল দেখলেই সে গা ছুঁয়ে পরম মমতায় আদর করে। পাশে বসে খেলা করে। বাবার নজর তা এড়ায় না।

গত বছর তাই প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে মা বেড়ালটি যখন চার চারটি ছানা দিল তা থেকে বাবা আরাফকে একটা ছানা এনে দিলেন। খুব চমৎকার মিষ্টি চেহারা তার। সারা শরীর সাদা পশমে আবৃত। পিটপিট করে তাকায় আর মিউমিউ করে।

বেড়ালছানা পেয়ে আরাফের খুশি ধরে না। বাবা ছাদের ওপরে কাগজের বাক্সের মধ্যে তোয়ালে বিছিয়ে তার থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। বাজার থেকে এনে রাখলেন পাউরুটি আর ছোট চিংড়ি মাছ। খাবার জন্য আলাদা প্লেট আর বাটি। ওর নাম রাখা হলো মিনু।

খাবারের সময় মিনু পাশে এসে বসে। এদিক-ওদিক তাকায়। মিউমিউ করে। বাবা ওকে দুধভাত, কখনো দুধ-পাউরুটি মেখে দেন। আর একটি বাটিতে দেন মাছের কাঁটা বা মাংসের হাড্ডি। মিনু কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে খায় আর মিউমিউ শব্দ করে।

আজকাল মাও নিয়ম করে মিনুর জন্য চিংড়ি মাছ জ্বালিয়ে রাখেন। মিনুকে খেতে দেন। মিনু মহাখুশি। মুড়মুড় করে মাছ খায় আর লেজ নাড়াতে থাকে। বিকেল হলে মায়ের সঙ্গে আরাফ ও মিনু ছাদে যায়। মা পাটি বিছিয়ে দেন। সে পাটিতে বসে আরাফ বল খেলে। বল দূরে চলে গেলে মিনু বল কুড়িয়ে আনে। মা ও আরাফ দুজনেই হেসে ওঠে। বিকেলবেলা আরাফের একমাত্র বন্ধু হয় মিনু। কখনো পিঠের কাছে কখনো পায়ের কাছে গিয়ে বসে থাকে মিনু। এখন মা ওকে আর তাড়িয়ে দেয় না।

গত দু-মাসে মিনু পাঁচণ্ডপাচটি গেছো ইঁদুর শিকার করে এনেছে। ছোট ইঁদুর শিকার করেছে বারোটি। এ বছর বাড়ির নারকেল আর সুপারির ফুল নষ্ট করতে পারেনি ইঁদুরে। ছাদের পাশের ডাবগাছে অনেকগুলো ডাব এসেছে এবার। ঘরের আরশোলা সব নিশ্চিহ্ন হয়েছে মিনুর কারণে। মা এখন অনেক যত্ন করেন মিনুকে। আরাফের জন্য নাশতা তৈরি করলে একই সঙ্গে মিনুর জন্যও একটুকরো মাছে ভেজে দেন প্লেটে। মায়ের পাশে বসে মিনু রোজ মায়ের রান্না দেখে। মিনু বলে ডাকলেই মিউমিউ করে এক দৌড়ে চলে আসে মায়ের হাতের কাছে। মা ওর পিঠে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। মিনু এখন পুরোপুরি এ বাড়ির সদস্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close