আলমগীর কবির

  ০১ এপ্রিল, ২০২৩

মুক্তি ও নিশানের গল্প

‘রেলগাড়ি ঝমাঝম/পা পিছলে আলুর দম’। জানালার পাশে বসে মনে মনে ছড়া কাটছিল ফাহিম। মা-বাবার সঙ্গে দাদু বাড়ি যাচ্ছে সে। বাবা এক সপ্তাহ অফিসের ছুটি নিয়েছেন। ফাহিমের মনে তো আনন্দ ধরে না। সেও স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছে। ঢাকা থেকে তারা যাবে নাটোর। সেখানে তার দাদু বাড়ি। ফাহিম মনে মনে অনেক পরিকল্পনা করে রেখেছে। সে তার এই ভ্রমণের কথা ডায়েরিতে লিখে রাখবে।

ঝিকঝিক ঝিকঝিক ঝিকঝিক। মাঠ প্রান্তর নদী নালা পেরিয়ে ছুটে যাচ্ছে ট্রেন। ফাহিম মুগ্ধ চোখে সবকিছু দেখতে থাকে। তার নদী পছন্দ। ট্রেন পুলের ওপর আসতেই ঝনঝন ঝন বাজনা বাজতে থাকে।

ফাহিম এখন আর ছোট্টটি নেই। ক্লাস নাইনে পড়ে। তবু বাবা তাকে অনেক কিছু কিনে দিচ্ছেন। চকোলেট থেকে শুরু করে পাঁপড় ভাজা। পেয়ারা, শসা মাখানো। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে স্টেশনে এসব বিক্রি করছে। দুটি কারণে বাবা এটা-ওটা কিনছেন। ওদের কিছু না কিছু বিক্রি বাড়বে। আর ফাহিম যেন আনন্দ পায়।

হঠাৎ করে ট্রেনের বাঁশি বেজে উঠল। তার মানে সামনে কোনো স্টেশন আছে। ট্রেনের চলার গতি আস্তে আস্তে কমতে থাকে। একসময় ট্রেন থেমে যায়। স্টেশনের নাম শরতনগর। এখানে ট্রেন কিছুক্ষণ থামবে। ট্রেন থামতেই যাত্রীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কেউ ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছে। আবার নতুন যাত্রী উঠছে। ফাহিম সবকিছু মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।

ফুল কিনবেন? ফুল...

ফাহিম দেখে ছোট্ট একটা মেয়ে ফুল বিক্রি করছে। তার সঙ্গে তার চেয়ে বয়সে বড় একটা ছেলে আছে। সে পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে। পতাকা বিক্রি করছে। ছেলেটি আর মেয়েটি হয়তো বা ভাই-বোন।

ফাহিম তাদের ডেকে বলে, আমাকে একটা পতাকা, দুইটা ফুল দাও।

ফুল দুইটা কিনে বাবা আর মাকে দেয় ফাহিম। পতাকাটা সে তার হাতে রাখে। ছেলেটিকে ফাহিম জিজ্ঞেস করে, তোমাদের নাম কী?

ছেলেটি বলে, আমার নাম নিশান, ওর নাম মুক্তি।

তোমরা কি ভাই বোন?

জি।

তোমরা এত অল্প বয়সেই ফুল, পতাকা বিক্রি করছো?

আমরা স্কুলেও পড়ি। কিন্তু যেদিন ক্লাস ছুটি থাকে সেদিন ফুল পতাকা বিক্রি করি। আমাদের বাবার কাজে আমরা সাহায্য করি।

এই কথা বলে ছেলেটি মিষ্টি একটা হাসি দেয়। ভারি চমৎকার সেই হাসি!

একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি তোমাদের?

হ্যাঁ।

তোমাদের দুজনের এত সুন্দর নাম কে রেখেছেন?

নিশান বলে, আমার দাদু রেখেছেন। দাদু মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা।

কথা বলার মাঝেই ট্রেনের বাঁশি বেজে ওঠে। পুরো গল্পটা আর শোনা হলো না। তবে ভেতর থেকে শ্রদ্ধাবোধ আর ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। ফাহিমের চোখের পাতায় ভাসতে থাকে নিশান আর মুক্তির হাসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close