আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৩ মার্চ, ২০১৯

ইমাম পেলেন অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা

নিউজিল্যান্ড ‘অবিচ্ছেদ্য’ : ইমাম গামিল ফাউদা

গত শুক্রবারেই নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদের ইমাম গামিল ফাউদা মুখোমুখি হয়েছিলেন ভয়ংকর এক খুনির। গতকাল আজ জুমার নামাজে সেই ইমামই দেখলেন অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা এবং সমবেদনা। গতকাল আল নুর মসজিদে ওই হামলার এক সপ্তাহ পর জুমার নামাজে সমবেত হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। নৃশংস ওই হামলায় নিহত ৫০ জনের সম্মানে নিউজিল্যান্ড ও আশপাশের দেশগুলোতে পালন করা হয়েছে নীরবতা।

সমবেতদের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্নও ছিলেন। সেখানে সবার উদ্দেশ্যে সেই ইমাম ফৌদা বলেন, নিউজিল্যান্ডের প্রতিটা মানুষকে ধন্যবাদ, প্রত্যেকের চোখ দিয়ে যে অশ্রু পড়েছে তার জন্য ধন্যবাদ, ধন্যবার ফুলের জন্য, ধন্যবাদ তোমাদের ভালোবাসার জন্য। ধন্যবাদ তাদের প্রত্যেককে যারা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের মূল্য, আমাদের বুঝিয়েছেন যে আমাদের কেউ ভোলেনি।’ পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইমাম বলেন, আমাদের জীবন বাঁচাতে আপনারা প্রতিদিন নিজেদেন জীবন ঝুঁকিতে ফেলেন। সেই প্রতিবেশীদেরও ধন্যবাদ যারা সেদিন খুনির হাত থেকে বাঁচতে তাদের ঘরের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। গত শুক্রবারের স্মৃতিচারণ করে এই ইমাম বলেন, গত শুক্রবারে আমি এই মসজিদে দাঁড়িয়েই দেখেছি এক সন্ত্রাসীর চোখে ঘৃণার আগুন, যে নিরপরাধ ৫০টি মানুষকে খুন করল, আরো ৪২ জনকে আহত করল আরা সারা বিশ্বের লাখো মানুষের হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দিল।

আর আজ সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষের চোখে আমি ভালোবাসা আর সমবেদনা দেখছি। আর এতে ভালোবাসায় পূর্ণ হচ্ছে আরো লাখো মানুষের হৃদয় যাদের সবাই হয়তো সশরীরে এখানে উপস্থিত নেই, কিন্তু মানসিকভাবে তারা আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি আরো বলেন, এই সন্ত্রাসী চেয়েছিল তার কুদর্শন দিয়ে আমাদের আলাদা করতে। কিন্তু আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে নিউজিল্যান্ডকে ভাঙা যাবে না।

ফৌদা বলেন, সারা বিশ্বের উচিত নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে ভালোবাসা এবং একতার শিক্ষা নেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের হৃদয় ভেঙেছে, কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি, একে অপরের পাশে আছি। কেউ আমাদের বন্ধনে চিড় ধরাতে পারবে না। আমরা কেবল ভালোবাসব একে অন্যকে।’

‘এই হামলায় যত মানুষ মারা গেছেন সে সংখ্যাটা সাধারণ নয়, আর হামলার পর নিউজিল্যান্ড যে সংহতি দেখিয়েছে সেটা অসাধারণ।’ নিহতের পরিবারের উদ্দেশ্যেও কথা বলেন গামিল। কথা বলেন ইসলাম ফোবিয়া নিয়েও।

ইমাম গামিল ফাউদা আরো বলেন, নিউজিল্যান্ড ‘অবিচ্ছেদ্য’। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবায় তিনি বলেছেন, নিউজিল্যান্ডের জনগণের মাঝে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করে সফল হয়নি হামলাকারী। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্নের ভূমিকার প্রশংসা করে গামিল বলেছেন, ‘তার নেতৃত্ব বিশ্বের জন্য শিক্ষণীয়’। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা যায়।

গত শুক্রবার অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের সন্দেহভাজন হামলাকারীর লক্ষ্যবস্তু হয় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদ। শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক ডিনস এভিনিউয়ের আল নুর মসজিদসহ লিনউডের আরেকটি মসজিদে তার তা-বের বলি হয় অর্ধশত মানুষ। শুধু আল নুর মসজিদে হামলায় প্রাণহানি হয় ৪৩ জনের। ঘটনার দিন আল সেখানে ছিলেন ইমাম গামিল ফাউদা। তবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ভয়াবহ সে হামলার এক সপ্তাহ পর আবারও খুলেছে আল নুর মসজিদ। গতকাল শুক্রবার গামিলের নেতৃত্বে সেখানে আদায় করা হয়েছে জুমার নামাজ।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। হতাহতদের শ্রদ্ধা জানিয়ে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য অমুসলিমরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

খুতবা দিতে গিয়ে ইমাম গামিল এক সপ্তাহ আগের সে ভয়াবহ ঘটনাকে স্মরণ করেন। বলেন, গত শুক্রবার আমি এ মসজিদে ছিলাম এবং ওই সন্ত্রাসীর চোখে ঘৃণা আর ক্রোধ দেখেছি। আর আজ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তাকাচ্ছি, তখন আমি লাখো নিউজিল্যান্ডবাসী ও বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের চোখে ভালোবাসা আর সহানুভূতি দেখতে পাচ্ছি।

ইমাম গামিল আরো বলেন, যে মন্দ মতাদর্শ বিশ্বকে বিভাজিত করে দিয়েছে, সে মতাদর্শ ব্যবহার করে আমাদের দেশে বিভাজন তৈরি করতে চেয়েছিল এ সন্ত্রাসী। তবে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, নিউজিল্যান্ড অবিচ্ছেদ্য। এ হামলার কারণ হিসেবে কিছু রাজনৈতিক নেতা, কিছু সংবাদমাধ্যম ও অন্যদের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে দায়ী করেছেন ইমাম গামিল। এ ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইমাম গামিল বলেন, কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, সংবাদমাধ্যম ও অন্যদের ইসলামবিরোধী এবং মুসলিমবিরোধী বক্তব্যের ফলাফল এটি। গত সপ্তাহের ঘটনায় গোটা বিশ্বের কাছে প্রমাণ হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের কোনো রং নেই, বর্ণ নেই, ধর্ম নেই।

হামলাকারীর কবল থেকে বাঁচানোর জন্য যারা তাদের সেদিন নিজেদের ঘরের দরজা খুলে দিয়েছিলেন, গাড়ি নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন সেইসব প্রতিবেশীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন গামিল। হতাহতদের পরিবারকে নিবিড়ভাবে আগলে রাখায় এবং মুসলিমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাথায় কাপড় দেওয়ায় জাসিন্ডা আরডার্নকেও ধন্যবাদ জানান তিনি। বলেন, ‘তার নেতৃত্ব এ বিশ্বের জন্য শিক্ষণীয়।’ গতকাল শুক্রবার আল নুর মসজিদের সামনে হাগলি পার্কে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে যোগ দেন জাসিন্ডা আরডার্ন। এদিনও তার মাথা স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা ছিল। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে পুরো নিউজিল্যান্ডই ব্যথিত। আমরা সবাই এক।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close