আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৮ আগস্ট, ২০১৮

মিয়ানমারে দুই রয়টার্স সাংবাদিকের রায় স্থগিত

রোহিঙ্গা গণহত্যার তথ্য সংগ্রহের সময় মিয়ানমারে আটক ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা স্থগিত করেছে মিয়ানমারের একটি আদালত। সোমবার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত থাকলেও তা স্থগিত করে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর। মামলার বিচারক অসুস্থ থাকায় গতকাল সোমবার রায় ঘোষণা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত।

রয়টার্স সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনের অপরাধ প্রমাণিত হলে ১৪ বছরের কারাদ- ঘোষণা করা হতে পারে। গত ১২ ডিসেম্বর দুই পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে আটক হন ৩২ বছর বয়সী ওয়া লোন ও ২৮ বছর বয়সী কিয়াও সোয়েও। তখন থেকেই কারাবন্দি রয়েছেন তারা।

সোমবার এই মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিল বিচারক ইয়ে লুইনের। তবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রয়টার্সের সাংবাদিকদের শুনানিতে অংশ নেওয়া অপর বিচারক খিন মং মং এদিন আদালতে হাজির হয়ে বলেন, ‘বিচারক ইয়ে লুইন অসুস্থ হওয়ায় আমি এখানে ঘোষণা করতে এসেছি যে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই রায় ঘোষণা স্থগিত থাকবে।’ এই বছরের জানুয়ারি থেকে ইয়াঙ্গুনের আদালতে ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি চলছে। আদালতের সাক্ষ্যে ওই দুই সাংবাদিক ও এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় আটকাতে অথবা শাস্তি দিতে তাদের ফাঁদে ফেলে পুলিশ। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান নিয়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও তার সরকারের প্রতি চাপ জোরালো হওয়ার মধ্যেই এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে। জাতিসংঘের সংস্থার হিসেবে রাখাইনে ওই অভিযানের কারণে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে উঠেছে গণহত্যা, ধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগের অভিযোগ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা একে জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ আখ্যা দিয়েছে।

মিয়ানমার এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তবে ইন দীন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে তারা। সেনাসদস্য ও স্থানীয় বৌদ্ধরা তাদের হত্যা করে বলে মেনে নিয়ে কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করেছে মিয়ানমার। আটক হওয়ার আগে ইন দীন গ্রামের ওই হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। আট মাস ধরে চলা শুনানিতে ওয়া রোন ও কিয়াও সোয়ে ইন বলে আসছেন, যে দুই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তারা সেদিন দেখা করতে গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে আগে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি তাদের। ইয়াঙ্গুনের একটি রেস্টুরেন্টে ১২ ডিসেম্বর প্রথমবার দেখা করতে গেলে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের হাতে রোল করা কিছু কাগজ ধরিয়ে দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের গ্রেফতার করে চোখ বেঁধে সাদা পোশাকের পুলিশের একটি গাড়িতে তোলা হয়।

এ বছরের এপ্রিলে পুলিশ কর্মকর্তা মোয়ে ইয়ান নাইন আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে বলেন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা অধীনস্তদের ওই দুই সাংবাদিককে ফাঁদে ফেলতে গোপন নথি দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে অন্য পুলিশ প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের সাক্ষ্যে বলেছে, নিয়মিত একটি ট্রাফিক পুলিশ চেকপোস্টে ওই দুই সাংবাদিককে তল্লাশি করা হয়। যে কর্মকর্তারা তাদের তল্লাশি করেছেন তারা জানতেন না যে তারা সাংবাদিক। ওই তল্লাশির সময়ে তাদের কাছে অজ্ঞাত উৎস থেকে পাওয়া গোপন নথি পাওয়া যায়। এদিকে, আজ জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। এদিন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমার বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close