ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল

  ২১ মার্চ, ২০১৭

মূত্রাশয়ে প্রদাহ বা সিস্টাইটিস

মূত্রাশয়ের প্রদাহকে সিস্টাইটিস বলা হয়। এই রোগটি মেয়েদের বেশি হলেও পুরুষরাও এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে; এবং সব বয়সের পুরুষই আক্রান্ত হতে পারে। মূত্রাশয়ের প্রদাহের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। সাধারণ কিছু ধরন হলো-

ব্যাকটেরিয়াজনিত মূত্রাশয়ের প্রদাহ : এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরন। পায়ুপথ থেকে ব্যাকটেরিয়া এসে মূত্রনালি দিয়ে মূত্রাশয়ে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ ঘটায়।

ইর্ন্টাস্টিশ্যাল সিস্টাইটিস : সাধারণত মূত্রাশয়ে আঘাতের কারণে এটি হয় এবং এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের উপস্থিতি খুব কম থাকে। এ ধরনের রোগীর রোগ নির্ণয়ে সচরাচর অনেকেই ভুল করেন। এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। তবে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে।

রেডিয়েশন সিস্টাইটিস : যেসব রোগী ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য রেডিয়েশন নিচ্ছে, তাদেও সাধারণত এই সমস্যা দেখা দেয়।

হেমোরেজিক সিস্টাইটিস : এ ধরনের মূত্রাশয়ের প্রদাহে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়ে।

রোগের কারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

স্বাভাবিক জীবাণুমুক্ত মূত্রপথ (মূত্রনালি ও মূত্রাশয়) ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হলে সিস্টাইটিস হয়। এ ক্ষেত্রে মূত্রপথে জ্বালা করে এবং প্রদাহ হয়। এটা খুবই সাধারণ।

বয়স্ক লোকদের সিস্টাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

শতকরা ৮৫ ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে সিস্টাইটিসের কারণ হলো ‘ই-কলাই’ নামক ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলী-অন্ত্রপথের নিচের অংশে দেখা যায়। যৌন মিলন সিস্টাইটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কারণ, মিলনের সময় ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালি দিয়ে মূত্রাশয়ে ঢুকতে পারে। একবার ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়ে ঢুকলে সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। কিন্তু তার আগেই যদি ব্যাকটেরিয়া বংশ বিস্তার শুরু করে, তাহলে মূত্রাশয়ে সংক্রমণ ঘটে। সিস্টাইটিসের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে মূত্রাশয় বা মূত্রনালিতে প্রতিবন্ধকতা, মূত্রপথে কোনো যন্ত্র প্রয়োগ (যেমন, ক্যাথেটার বা সিস্টস্কোপ), ডায়াবেটিস, এইচআইভি, ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের কারণে কিডনির ক্ষতি প্রভৃতি। বয়স্ক লোকদের সিস্টাইটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। যেমন- প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি, প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ এবং মূত্রনালির সংকীর্ণতার কারণে মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হতে পারে না। ফলে মূত্রথলিতে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। আরো কিছু অবস্থা সিস্টাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন-

* পর্যাপ্ত তরল না খাওয়া।

* যত্রতত্র পায়খানা করে ফেলা। অর্থাৎ, পায়খানা ধরে রাখতে না পারা।

* হাঁটাচলা কম করা অথবা না করা

* দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকা

* তলপেটে চাপ অনুভব করা

* প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা কষ্ট হওয়া

* ঘন ঘন প্রস্রাব করা বা প্রস্রাবের তীব্র ইচ্ছা জাগা

* রাতেরবেলায় প্রস্রাবের ইচ্ছা জাগা

* প্রস্রাব ঘোলাটে হওয়া

* প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া

* প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া

চিকিৎসা : যেহেতু ইনফেকশন কিডনিতে ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে এবং বয়স্ক লোকদের জটিলতা সৃষ্টির ঝুঁকি বেশি থাকে, সেহেতু দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্রাবের কালচার পরীক্ষার ফলাফল দেখে অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন করতে হবে। মূত্রপথের দীর্ঘস্থায়ী অথবা বার বার সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে। তা না হলে আরো বেশি সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।

লেখক : ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist