মো. আরিফুর রহমান ফাহিম

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ব্যথায় ব্যথার ওষুধ নয় সমাধান

অসুখে ওষুধ খেতে হয় এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা অনেক সময় অকারণেই ওষুধ খাই, যা শরীরের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর। আমাদের দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেরাই অথবা অন্যের পরামর্শে বা ওষুধ বিক্রেতার দেওয়া ওষুধ খেয়ে থাকি। অন্যদিকে অসুখে ওষুধ খেতে আমরা যতটা খেয়ালি, চিকিৎসকের দেওয়া নিয়ম মেনে ওষুধ খেতে ঠিক ততটাই বেখায়ালি। মনে রাখতে হবে, ওষুধই জীবন বাঁচায়, অন্য অর্থে এই ওষুধই জীবন কেড়ে নেয়। তাই ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ওষুধ বিক্রেতাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া রোগীরা সবচেয়ে বেশি কিনতে আসেন ব্যথানাশক ওষুধ। আমাদের ধারণা, কোনো কারণে শরীরে ব্যথা হলে তা ব্যথার ওষুধ খেলেই ভালো হয়ে যাবে। আর এ কারণে আমরা অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ব্যথানাশক ওষুধ খাচ্ছি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ব্যথার ওষুধ কোনো সমাধান নয়। পেইন কিলার বা ব্যথার ওষুধ শরীরকে কয়েক ঘণ্টার জন্য ব্যথামুক্ত রাখলেও এই ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে পেটে গ্যাস্ট্রিক আলসারে আক্রান্ত হওয়াসহ ধীরে ধীরে কিডনি-লিভার নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের শরীরে ব্যথার অনুভূতির জন্য দায়ী প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস। পেইন কিলার বা ব্যথার ওষুধ মূলত শরীরে এই প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস তৈরিতে বাধা দেয়। এই প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস ব্যথা ও ব্যথার কারণে শরীর ফুলে যাওয়ার জন্য দায়ী। ব্যথানাশক ওষুধ দেহে সাইক্লো অক্সিজেনেস থেকে এই প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস তৈরি হতে দেয় না বলে ব্যথার অনুভূতি হয় না। কিন্তু এই প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস শরীরে ব্যথার অনুভূতি তৈরি করা ছাড়াও পরিপাকতন্ত্রের উপরিভাগে প্রতিরক্ষামূলক আবরণ দেওয়ার কাজটি করে থাকে। কিন্তু রোগী পেইনকিলার বা ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার কারণে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস তৈরি না হওয়ায় পাকস্থলীর মিউকাস লেয়ার ক্ষত হতে থাকে এবং এ কারণে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার রোগ হয়। অন্যদিকে আধুনিক ব্যথানাশক ওষুধ কক্স-২ ইনহিবিটর ব্যথার জন্য দায়ী প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস তৈরিতে বাধা দিলেও পরিপাকতন্ত্রে আবরণ তৈরি করার প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনসকে বাধা দেয় না। ফলে রোগীর গ্যাস্ট্রিক বা আলসার হয় না। কিন্তু এ জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ আবার হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। ইদানীং আবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ ডাইক্লোফেনাকের সঙ্গে মিসোপ্রোস্টল যুক্ত করে নতুন ওষুধ রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও জেনে রাখা দরকার, মিসোপ্রোস্টল গর্ভবতীদের গর্ভপাত ঘটায় এবং বিকলাঙ্গ শিশু জন্মানোর ঝুঁকি বাড়ায়। সব ধরনের পেইন কিলার বা ব্যথানাশক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গ্যাস্ট্রিক বা আলসার ছাড়াও রোগীর বমি, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট, পাতলা পায়খানা, চুলকানি ইত্যাদি এবং দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারে পাকস্থলী, কিডনি ও লিভারে নানা রোগসহ জটিল সমস্যা হতে পারে। তাই অকারণে পেইনকিলার বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন নয়। মনে রাখবেন, ব্যথার ওষুধে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close