নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি বেড়েছে
দেশে প্রবাসী আয় বেড়েছে। ডলার নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিও কেটে গেছে। আগের মতো দাম নিয়েও তেমন হইচই নেই। সরকারি ব্যাংকগুলোর কিছু বকেয়া বিল এখনো রয়ে গেছে। চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে ৯৯ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে ৩৮৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় গত মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৫৪ কোটি ডলার বা ১৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত সেপ্টেম্বরে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৩৩ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গত মাসে প্রবাসীরা ৮০ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। এর আগে আগস্টেও দেশে এসেছিল ২২২ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে ৩৮৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় গত মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৫৪ কোটি ডলার বা ১৬ শতাংশ। গত জুলাইয়ে ৩৮২ ও আগস্টে ৪০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তখন রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৩ ও ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১ হাজার ১৭৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। ডলার নিয়ে অস্থিতিশীল যে পরিস্থিতি ছিল তা কেটে গেছে। আগের মতো দাম নিয়েও তেমন হইচই নেই। সরকারি ব্যাংকগুলোর কিছু বকেয়া বিল এখনো রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮১ কোটি ডলার। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। এ ছাড়া গত জুলাই-আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমেছে।
রিজার্ভ পরিস্থিতি : ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর বৈশ্বিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে দেশে প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করে। এতে ২০২১ সালের জুনে মোট রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে সংকট সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি শুরু করলে রিজার্ভ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে গত মে মাসে মোট রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলারে (২৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) নেমে আসে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, এ সময় রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৩২ কোটি ডলারে (১৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন)। তবে তখন প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ছিল ১৩ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা কম।
তবে গত ৪ আগস্টে মোট রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলারে, যার মধ্যে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ছিল ১৫ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। ৯ অক্টোবর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দায় পরিশোধের পর মোট রিজার্ভ কমে হয়েছে ২৫ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার ও ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে হয়েছে ১৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।
ডলার-সংকটের মধ্যে আর্থিক হিসাব ও চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। ওই বছরই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। গত জুনে তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৫ কোটি ডলার আসে। চলতি মাসেই চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা রয়েছে। এই ঋণের অর্থ সরাসরি রিজার্ভে যুক্ত হয়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার নিয়ে যে হাহাকার ছিল তা অনেকটা কমে এসেছে। বিদেশি মেয়াদোত্তীর্ণ বিলের অনেকই মেটানো হয়েছে। এরপরও ৩ বিলিয়ন ডলারের দেনা রয়ে গেছে, যা আগামীতে পরিশোধ করতে হবে।
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ডলার নিয়ে অস্থিতিশীল যে পরিস্থিতি ছিল, তা কেটে গেছে। আগের মতো দাম নিয়েও তেমন হইচই নেই। সরকারি ব্যাংকগুলোর কিছু বকেয়া বিল এখনো রয়ে গেছে। এজন্য ডলারের দাম ১২০ টাকার ওপরে উঠেছে। এসব দায় শোধ হয়ে গেলে ও প্রণোদনা উঠিয়ে দিলে ডলারের দাম ১২০ টাকার নিচে নেমে আসতে পারে।
"