মেহেদী হাসান

  ০৭ এপ্রিল, ২০২৪

ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ বাস ট্রেন লঞ্চে ভিড়

* বাসে অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ * কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরের নিরাপত্তা * আগাম বুকিং ৭০ শতাংশ লঞ্চের কেবিন

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগাম বন্ধের সুবাদে অনেকেই পরিবারসহ গ্রামে ছুটেছেন বেশ আগেই। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে অগ্রিম প্রস্ততি হিসেবে কেটেছেন বাস, ট্রেন ও লঞ্চের টিকিট। টিকিট প্রস্ততি পর্ব শেষের পর ঈদের অন্তত ৪ দিন আগে থেকেই তারা বাড়ি ফিরতে ভিড় করছেন বাস, ট্রেন বা নৌপথে। ফলে ভিড় জমতে শুরু করেছে স্থল ও জলপথে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও সদরঘাট লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে বাস। দীর্ঘদিন বসে থাকা লঞ্চগুলোও ঈদ উপলক্ষে নতুন করে প্রস্তুত হয়েছে। টিকিট কালোবাজারি রোধে ট্রেনে নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা। এছাড়া কম ভাড়ায় অনেকে পরিবহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাক। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গাজীপুর ও উত্তরবঙ্গের পথে দুই দফায় ১২টি ফ্লাইওভার চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এটি ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ১২টি ফ্লাইওভার চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ায় যানজট আগের চেয়ে কমবে। মানুষ দুর্ভোগ ছাড়াই ঈদে বাড়ি যেতে পারবে।

বাসে অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ : এবার ঈদের সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে ১০ এপ্রিল থেকে। তবে গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকেই শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। ভোগান্তিবিহীন যাত্রার জন্য পরিবারের সদস্যদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভিজিলেন্স টিমের বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কোনো যাত্রী অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিআরটিএ-এর পক্ষ থেকে প্রতিটি কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও করা হচ্ছে মাইকিং। তবে এত ব্যবস্থার পরও কাউন্টারগুলোর প্রতি বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠছে। আছে বিলম্বে বাস ছাড়ারও অভিযোগ। তবে যাত্রীদের এসব ভোগান্তি ম্লান হয়ে যাচ্ছে ঈদ আনন্দের কাছে।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ভাইকে নিয়ে দিনাজপুর যাচ্ছিলেন হাবিবুল বাসার। গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে তিনি বলেন, ওভারটাইম করার কারণে ছুটি পেয়েছি। তাই একটু স্বস্তিতে যেতে আগেই বাড়ির পথ ধরেছি। তবে কিছুটা বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ সময়ে আমাদের রুটে নন এসি বাসের ভাড়া থাকে ৮০০ টাকা। সেখানে ৯৪০ টাকা নেওয়া হয়েছে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও মাগুরাগামী যাত্রীদের শ্যামলী ট্রাভেলস, শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস, সাতক্ষীরা লাইন, এসপি পরিবহন এবং কে লাইন পরিবহনের প্রতিটি টিকিটের জন্য অতিরিক্ত ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে ভাড়া বেশি নেওয়ার ব্যাপারে টিকিট কাউন্টারে থাকা বুকিং সহাকারীরা বলছেন, মালিকের নির্দেশেই তারা বেশি ভাড়া আদায় করছেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রামমুখী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। অতিরিক্ত চাপের কারণে মেঘনা সেতু থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতু পর্যন্ত যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। এছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় যানজট তৈরি হয়েছে। ফলে এই এলাকায় থেমে থেমে চলছে গাড়ি।

কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরের নিরাপত্তা : বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘টিকেট যার, ভ্রমণ তার’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিন স্তরের পরীক্ষা শেষে তবেই যাত্রীদের প্ল্যাটফরমে ঢুকতে দিচ্ছে। স্টেশনে ঢোকার মুখেই বাঁশ দিয়ে কয়েকটি প্রবেশপথ বানানো হয়েছে। সেখানে হাতে টিকেট পরীক্ষা করার মেশিন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রেলের টিটিই কর্মকর্তারা। তাদের ওই মেশিনে টিকেট স্ক্যান করার পর তবেই যাত্রীরা ঢুকতে পারছেন প্ল্যাটফরমে। টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে রেলওয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছে। তাই এবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের চিত্র আলাদা।

এদিকে, আগামী ১১ এপ্রিল ঈদের সম্ভাব্য দিন হিসাব করে সূচি সাজিয়েছে রেলওয়ে। সূচি অনুযায়ী ২৪ মার্চ থেকে ঘরমুখো মানুষের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করে রেল। ওই দিন দেওয়া হয় ৩ এপ্রিলের টিকেট। এভাবে পর্যায়ক্রমে ৩০ মার্চ বিক্রি হয় ৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকেট।

তবে গতকাল শনিবার দুপুর থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছে ট্রেনে। নিরাপদ যাত্রার বাহন হিসেবে ট্রেনকে বেছে নেওয়া যাত্রীরা ছাড়ছেন ঢাকা।

স্টেশনের প্রবেশমুখে টিকেট পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা এ এইচ এম সাজ্জাদুল বলেন, এখনো অনেকে টিকিট ছাড়াই স্টেশনে চলে আসছেন। কেউ আসছেন অন্যের টিকিট নিয়ে। আজকে আমরা অনেকেকে জরিমানা করেছি, তাদের বুঝিয়েছি, নিজের টিকিট নিজে নিজে নিয়ে আসার জন্য। পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। কালোবাজারিদের কোনো দৌরাত্ম্য নাই। খুব শৃঙ্খলার সঙ্গে যাত্রীরা যাচ্ছেন।

অগ্রিম বুকিং ৭০ শতাংশ লঞ্চের কেবিন : নৌপথে ঈদযাত্রার পূর্ণপ্রস্তুতি নিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রা শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় সব রুটের লঞ্চের ৭০ শতাংশের বেশি কেবিন বুকিং হয়ে গেছে।

এদিকে ঈদযাত্রা ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। সদরঘাট নৌথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, বুড়িগঙ্গা নদী ও টার্মিনালে নৌপুলিশের একাধিক টিম টহল দিচ্ছে। পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুর জেলায় সড়কপথে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। ফলে আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে নৌপথের যাত্রী। তবে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় নৌপথে এখন ভোলা জেলার বিভিন্ন রুটে লঞ্চগুলো একছত্রভাবে যাত্রী পরিবহন করছে। ভোলা সদর, বোরহানুদ্দিন, চরফ্যাশন, ইলিশা, বেতুয়া, মনপুরাসহ সব রুটে চলাচলরত লঞ্চগুলো এখনো ভালো ব্যবসা করে যাচ্ছে। ঈদযাত্রা শুরুর আগেই এসব রুটের লঞ্চগুলোয় ৭০ শতাংশের বেশি কেবিন বুকিং হয়ে গেছে।

সদরঘাট টার্মিনালের নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, রমজানের শেষ শুক্রবার হওয়ায় যাত্রী কিছুটা বেড়েছে তবে চাপ নেই। শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৮টি লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে। ভিড়েছে ৩৭টি। সবমিলিয়ে শুক্রবার ৭০টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৬৬টি। শনিবারেও প্রায় একই সংখ্যক লঞ্চ ছেড়ে গেছে।

লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, যাত্রী সংকটের কারণে দীর্ঘদিন বসে থাকা লঞ্চগুলোও ঈদ উপলক্ষে নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ছুটি বেশি হওয়ায় এবারের ঈদে অধিকসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়বে। ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-ভোলা, ঢাকা-রাঙ্গাবালী, ঢাকা-পটুয়াখালী নৌরুটে চলাচলকারী সব লঞ্চেই ভিড় হবে। ঢাকা-পটুয়াখালী, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-ভোলা, ঢাকা-চাঁদপুর রুটে যে লঞ্চগুলো চলছে সেগুলো বেশ বড় ও বিলাসবহুল। এসব লঞ্চে এখন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা নেই। এবারো সমস্যা হবে না। সব লঞ্চ ঈদযাত্রার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close