মাওলানা আমিন আশরাফ

  ০৭ এপ্রিল, ২০২৪

নারীদের বিশেষ কিছু আমল

আত্মশুদ্ধির মহিমান্বিত রমজান এখন বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরোদমে। শাওয়াল মাস আসি আসি করছে। রমজানের আজ ২৭তম দিন। এখনো সময় আছে মহান আল্লাহর কাছে নিজেদের আর্জি পেশ করার। মাহে রমজানের দায়িত্ব-কর্তব্য ও আমলের দিক থেকে নারীদের বিষয়টি একটু আলাদা। কেননা পুরুষরা বাইরের নানা দিক নিয়ে জোর ব্যস্ত থাকেন, তখন ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও রমজানের সম্পূর্ণ হক আদায় করতে পারেন না।

সাধারণত মেয়েদের বাইরের ব্যস্ততা কম থাকে। ঘরোয়া পরিবেশেই কাটে তাদের রোজার দিনগুলো। ফলে তাদের পক্ষে রমজানের পুরোপুরি হক আদায় করা অনেক সহজ। যেহেতু নারীদের জন্য কিছুটা বাড়তি সুযোগ রয়েছে, তাই তাদের জন্য উচিত, রমজানের প্রতিটি সেকেন্ডকে কাজে লাগানো।

কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেতে হলে নারীদের রমজান মাসে কিছু জিনিসের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখতে হবে-

১. চলাফেরা ও চালচলনে শালীন হতে হবে। জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকা এবং এ ধরনের যেকোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন না হওয়া রোজার একটি অংশ। নারীদের খোলামেলা চালচলন তাদের নিজেদের রোজার পবিত্রতার জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি পরপুরুষের রোজা নষ্ট কিংবা হালকা করার জন্যও দায়ী। এজন্য রমজানের দিনে নারীদের বাইরে বের হতে হলে শালীনতার সঙ্গে বের হওয়া উচিত।

২. অধিকহারে দান-সদকা করা। কেননা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় রমজানে দান-সদকার ফজিলত অনেক বেশি। জাকাত-ফিতরাও দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নারীদের রয়েছে দারুণ সুযোগ। সংসারের নিয়ন্তা হিসেবে তারা ইচ্ছে করলে এ মাসে গরিব-দুঃখীর দিকে সহানুভূতির হাত প্রসারিত করতে পারেন। এর দ্বারা আল্লাহর বিশেষ কৃপা পাওয়ার আশা করা যায়।

৩. সবার সঙ্গে মার্জিত আচরণ করা। রোজা রাখলে ক্ষুধা লাগবে, পিপাসা পাবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর প্রভাব যেন কোনোভাবেই আচরণে প্রকাশ না পায়। সাংসারিক কাজের ঝামেলার কারণে অনেক নারী রোজা রেখে মেজাজ খারাপ করে রাখেন।

৪. রোজা রেখে অহেতুক কাজ বর্জন করা উচিত। হাদিসে রোজাদারকে নিরর্থক কাজ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ করা হয়েছে। রোজা রেখে অনেকের দিন কাটতে চায় না- এই অজুহাতে বিভিন্ন আজেবাজে কাজে সময় ব্যয় করেন। কিন্তু এটা সমীচীন নয়। কেননা রোজাদারের সারা দিন হবে ইবাদতের শামিল। বাহ্যিক কোনো ইবাদত না করলেও তার ধ্যান-ধারণা থাকবে ইবাদতের প্রতি। রোজার পবিত্রতা নষ্ট করে এমন কোনো কাজ যেন না হয়।

৫. সংসারের শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতি খেয়াল করা। বছরের অন্যান্য সময় থেকে যেহেতু রমজানের রুটিন কিছুটা ভিন্ন, সেজন্য সাংসারিক কাজকর্ম কিংবা পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তা নিরসন করার দায়িত্ব নারীদের ওপর। অন্যের সুবিধার কথা চিন্তা করে, নিজে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করে হলেও সংসারের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।

৬. বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। রমজান হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। এ মাসের সঙ্গে কোরআনের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব অনেক গুণ বেশি।

৭. অপচয় রোধ করা। রমজানে যত খুশি খরচ করো, তাতে কোনো বাধা নেই- এ ধরনের একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত। এর ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেকটি পরিবারেই খরচের মাত্রা বেড়ে যায়, যা অপচয়ের গণ্ডি স্পর্শ করে। কিন্তু মূলত এ কথা ঠিক নয়। রমজান সংযমের মাস হিসেবে সব কিছুতেই সংযমতা আনতে হবে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র রমজানের এই শেষ সময়ে এসে রমজানের পুরোপুরি ফায়েজ ও বরকত লাভে আমাদের ধন্য করুন। আমিন।

লেখক : আলেম, শিক্ষক ও অনুবাদক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close