নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ এপ্রিল, ২০২৪

আলোচনায় বসার আগেই সহিংস কেএনএফ

পাহাড়ে যৌথ অভিযান আতঙ্ক

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ। আত্মপ্রকাশের শুরুতে পাহাড়ের দুই জেলার ৯ উপজেলা নিয়ে আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল সংগঠনটি। পরে এটি যুক্ত হয় চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে। বান্দরবানের থানচি ও রুমাসহ আশপাশের মানুষজন বহু আগে থেকেই এই সংগঠনের সদস্যদের উৎপীড়নের শিকার। নতুন করে কেএনএফের হামলা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে আতঙ্কে বিভিন্ন গ্রাম থেকে সরতে শুরু করেছেন লোকজন।

কেএনএফ ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে। গত জুলাইয়ে সংগঠনটির সঙ্গে সরকারের সংলাপ হয় প্রকাশ্যে ও ভার্চুয়ালি। তার ধারাবাহিকতায় আগামী ২২ এপ্রিল আলোচনায় বসার তারিখ ছিল। তবে তার আগেই দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতি, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দেয় সংগঠনটি। প্রকাশ করে সহিংসতার নগ্ন রূপ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কেএনএফের কমপক্ষে ৪০০ সশস্ত্র যোদ্ধা আছে। তাদের নারী সদস্যও রয়েছে। ২০২০ সাল থেকে পাহাড়ে সক্রিয় এ সংগঠনটি। বান্দরবানের বম জাতি গোষ্ঠীর কয়েকজন ব্যক্তি এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভিত গড়ে তোলেছেন। তাদের মূল সংগঠনের সভাপতি নাথান বম। নাথান বম রুমা উপজেলার এডেনপাড়ার অধিবাসী। নাথান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক স্নাতক। রুমার এডেনপাড়ায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা।

কেএনএফ দাবি করেছে, তাদের সামরিক শাখার শতাধিক সদস্য গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে যায় আড়াই বছর আগে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গত বছর কেএনএফের সন্ত্রাসীদের চারটি হামলায় পাঁচ সেনাসদস্য নিহত হন। ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) সঙ্গে সংঘর্ষে ওই বছর রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাংপাড়ায় আটজন ও রুমা উপজেলার মুয়ালপিপাড়ায় একজন নিহত হন। গত বছরের ৮ মে রোয়াংছড়ি উপজেলা পাইংখিয়ংপাড়ায় আওয়ামী লীগের একজন নেতাসহ বম জনগোষ্ঠীর তিনজন এবং ২০২৩ সালের ২২ মার্চ একই উপজেলার রামথারপাড়ায় থংচুল বম নামের এক কারবারিকে (পাড়াপ্রধান) গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০২২ সালের ২১ জুন রাঙামাটির বিলাইছড়ির বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় তিন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের মতে, কেএনএফের নতুন হামলার কারণে কেএনএফ অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় শান্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কেএনএফের ব্যাংক লুটের চেষ্টা, ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে অপহরণের ঘটনার পর বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। তারা ভীতিকর পরিবেশে দিনযাপন করছেন। বিশেষ করে রুমা উপজেলার বেশিরভাগ বাসিন্দা আতঙ্কে আছেন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বান্দরবানের বেশকিছু থানায় পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয়েছে।

রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে হামলা চালায় অস্ত্রধারীরা। ব্যাংকের ভল্টে থাকা ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা নিতে পারেনি তারা। তবে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করে। অস্ত্রধারীরা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুমা থেকে তাকে উদ্ধার করে র‍্যাব। রুমার ঘটনার মধ্যেই বুধবার দুপুরে থানচি উপজেলার দুটি ব্যাংকের শাখা থেকে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা লুট করে অস্ত্রধারীরা। এই ঘটনায় পৃথক ছয়টি মামলা করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে রামু ও থানচিতে ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ রয়েছে।

গতকাল শনিবার রুমার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এরপরই বান্দরবানে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করেছে সেনা-র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close