প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০২ এপ্রিল, ২০২৪

গাড়ি ও ঘরের জানালার কাচ ক্ষতিগ্রস্ত, টিনের চালা ফুটো, শতাধিক আহত

সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং ময়মনসিংহের নান্দাইলে আগাম কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত রবিবার রাতের এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। শিলার আঘাতে সিলেটে শতাধিক ও সুনামগঞ্জে গাছের ডাল ভেঙে চারজন আহত হয়েছেন। এছাড়া সিলেটে শিলার আঘাতে গাড়ি ও ঘরের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। ফুটো হয়ে গেছে কাঁচা ঘরের টিনের চালা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চুয়াডাঙ্গা : চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, আজ (সোমবার) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে জেলায় সর্বোচ্চ। জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ঘরে উঠতে পারে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোজাদারদের সন্ধ্যার পর থেকে বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে। শিশু, কিশোর ও যারা রোজা থাকতে পারছেন না, তাদের ঘন ঘন পানি ও শরবত পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সিলেট : গত রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় সিলেটে কালবৈশাখী শুরু হয়ে প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ ঝড়ে টিনের ঘর, গাড়ির গ্লাস ও ফসলের মাঠ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, রবিবার রাতের শিলাবৃষ্টিতে আজ (সোমবার) বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতালে ১০৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে গুরুতর আহত কেউ ছিলেন না। সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এর আগে সিলেটে এরকম শিলাবৃষ্টি দেখা যায়নি বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করছেন অনেকেই। রাস্তায় চলাচলা করা বিভিন্ন গাড়ির গ্লাসও ভেঙে যায় শিলার আঘাতে। কারো কারো বাসার টিনের চালা ফুটো ও জানালার কাচের গ্লাস শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত হয়েছেন খোলা জায়গায় ও রাস্তায় অবস্থান করা কেউ কেউ। এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল। নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রচণ্ড শব্দে মনে হয়েছিল ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এরকম বড় শিলাবৃষ্টি আগে কখনো দেখেননি।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। রবিবার রাত ১০টা ২০ মিনিটের পর বাতাসের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে হাওরের আগাম জাতের ধানের ক্ষতি হয়েছে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘রাত সোয়া ১০টায় তীব্র বেগে ঝড় আসে। সঙ্গে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঝড়ে গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ সুনামগঞ্জ শহরের নারী উদ্যোক্তা সৈয়দা ফারহানা ইমা বলেন, ‘ঝড়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে গাছপালা ভেঙে পড়েছে। কালীবাড়িতে একটি চলন্ত অটোরিকশার ওপর গাছ ভেঙে পড়ে চালক ও তিন নারী আহত হয়েছেন।’ শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজার হাইস্কুলের শিক্ষক ইয়াকুব শাহরিয়ার বলেন, ‘ঝড়ে পাগলা বাজারের টিনশেডের কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কে গাছপালা ভেঙে পড়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সুনামগঞ্জ শহরের ইকবাল নগরে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে যানচলাচল বন্ধ আছে বলে জানান তিনি।’ এদিকে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে রাত সোয়া ১১টায় আবারও বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘ঝড়ের সঙ্গে মাঝারি শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে হাওরের আগাম ধানের জাতের কিছু ক্ষতি হতে পারে। আমরা সব জায়গায় খবর পাঠিয়েছি। তবে এখন হাওরে ফসলের ক্ষতি তেমন হবে না বলে জানান তিনি।’

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) : জেলার নবীগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ভয়ংকর শিলাবৃষ্টি। মাত্র ১০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে শহরসহ ৬০টি গ্রাম। এ তাণ্ডব ভয় ধরিয়েছে মানুষের মনে। রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় ঝড় শেষ হাওয়ায় শীতল হয়ে আসে প্রকৃতি। এরপর ঝড়ো বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। এক একটি শিলা যেন বড় বড় পাথর। শিলাবৃষ্টিতে চলাচল করা অসংখ্য যানবাহনের গ্লাস ভেঙে পড়েছে। ব্যাহত হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। কারো কারো বাসার টিনের চালা ফুটো ও জানালার কাচে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে শেষ হয় শিলাবৃষ্টি। শিলার আঘাতে অনেক পাখিকে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এদিকে মাত্র ১০ মিনিট শিলাবৃষ্টির পর হবিগঞ্জ জেলার সব উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এতে প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে। ক্রেতারা ঈদের কেনাকাটা করতে স্বাভাবিক যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়েছেন; পড়েছেন ভোগান্তিতে। নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে শহরসহ কয়েকটি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ লাইন ও খুঁটি সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে।

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) : জেলার নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কৃঞ্চচন্দ্রপুর গ্রামের ১০টি ঘর ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে পানের বরজসহ ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। সোমবার ভোর রাতে কৃঞ্চচন্দ্রপুর গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে এ ক্ষয়ক্ষতি হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, ঘরের চালা ও ঘরের বেড়া উড়ে গেছে। ঘরের টিনের চালা ও আবসাবপত্রগুলো একটু দূরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। আবদুস সালাম নামে একজনের পানের বরজ ঝড়ের বিধ্বংস্ত হয়ে গেছে। খবর পেয়ে মোয়াজ্জেমপুর ইউপি চেয়ারম্যান তাসলিমা আক্তার শিউলী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close