আমিনুল ইসলাম হুসাইনী

  ০২ এপ্রিল, ২০২৪

জাকাত সম্পদকে পবিত্র ও বৃদ্ধি করে

আল্লাহতায়ালা আমাদের কাউকে সম্পদশালী করেছেন। আবার কাউকে করেছেন গরিব। আল্লাহ মূলত ধনী-গরিব তারতম্যের মাধ্যমে বান্দাকে পরীক্ষা করছেন। যাদের আর্থিক অসচ্ছলতায় রেখেছেন, তাদের নিচ্ছেন ধৈর্যের পরীক্ষা। আর যাদের সম্পদশালী করেছেন, তাদের নিচ্ছেন ত্যাগের পরীক্ষা। আল্লাহতায়ালা সম্পদশালীর ওপর জাকাত ফরজ করেছেন। জাকাত ইসলামের অন্যতম রোকন। ফরজ বিধান। নিসাব পরিমাণ সম্পদ (সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা কিংবা সমপরিমাণ সম্পদ) আছে এবং তা এক বছর সময় অতিক্রম করেছে, এমন ব্যক্তির জন্যে জাকাত ফরজ। রাসুল (সা.) মুআজ বিন জাবাল (রা.)-কে ইয়ামেনের গভর্নর হিসেবে পাঠানোর সময় বলেছিলেন, ‘তুমি সেখানের অধিবাসীদের জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহতায়ালা তাদের ধনীদের ওপর জাকাত ফরজ করেছেন; যা তাদের গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’ (বোখারি, হাদিস ১৩৯৫)।

অনেকেই নামাজ-রোজা ঠিকভাবে পালন করলেও জাকাতের ব্যাপারে গাফেল। অথচ জাকাত নামাজ-রোজার মতোই ফরজ ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। পবিত্র কোরআনে ‘আকিমুস সালাত ওয়া আ-তুজ জাকাত’ বাক্যটি একাধিকবার এসছে। যার অর্থ নামাজ কায়েম করো, জাকাত প্রদান করো। সম্পদের মোহ ত্যাগ করে আল্লাহর হুকুম শিরোধার্য করে নেওয়াই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু অনেকই আল্লাহর এই হুকুম মানতে চায় না। তারা মনে করেন, জাকাত দিলে তাদের সম্পদ কমে যাবে। অথচ জাকাত শব্দের অর্থই হলো বৃদ্ধি করা। জাকাত সম্পদকে পবিত্র ও বৃদ্ধি করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি তাদের সম্পদ থেকে সদকা (জাকাত) গ্রহণ করো। যার মাধ্যমে তুমি তাদের পবিত্র ও বরকতপূর্ণ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া করো। নিশ্চয়ই তোমার দোয়া তাদের পক্ষে প্রশান্তিদায়ক। আল্লাহ সব কথা শোনেন, সবকিছু জানেন।’ (সুরা তওবা, আয়াত ১০৩)

জাকাতে সম্পদ কমে না। বরং বাড়ে। এটা জানার পরও যারা জাকাত দেয় না। তাদের একটু ভেবে দেখার অনুরোধ। আজ আপনার কাছে যে সম্পদ আছে, আগামীকাল কিন্তু নাও থাকতে পারে। হঠাৎ যদি একটা দুর্ঘটনা হয় আর হাসপাতালে লাখ লাখ টাকা উড়াতে হয়, তখন কী করবেন? সম্পদ কী আগলে রাখা যায়? কারুনের মতো সম্পদশালী পৃথিবীতে আর একজনও হবে না। সেই কারুনকেও আল্লাহতায়ালা সম্পদসহ মাটির নিচে পুঁতে ফেলেছেন। আপনারও যদি তেমনটি হয়? এই দুনিয়ায় না হলেও পরকালের অবস্থা হবে ভয়াবহ কঠিন। হাদিসে তো স্পষ্ট বলাই আছে, ‘যে ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা সম্পদ দান করেছেন, অতঃপর সে তার জাকাত আদায় করেনি, কেয়ামতের দিন তার পুঞ্জীভূত সম্পদকে অতিশয় বিষধর সাপের রূপ দেওয়া হবে। যার চোখের ওপর দুটি কালো দাগ থাকবে। তারপর ওই সাপ তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পাশে দংশন করবে। বলবে, আমি তোমার সম্পদ। আমি তোমার সঞ্চয়।’ (বোখারি, হাদিস ১৪০৩)

ইসলামি উন্নত রাষ্ট্র গঠনে জাকাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আজকের বিশ্বে অমুসলিম রাষ্ট্রগুলো শক্তিধর হয়ে উঠছে বিভিন্ন ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে। দেশে দেশে মুসলমানদের হেনস্থা করা হচ্ছে অর্থের দাপটে। অথচ এই ফান্ডিং ও অর্থের সুষম ব্যবহার শিখিয়েছে ইসলাম। সেই ফান্ডিংয়ের নাম হচ্ছে জাকাত। আমাদের সম্পদশালীরা সম্পদকে কুক্ষিগত করে রাখছেন। ফলে মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবস্থা এত নাজুক হয়ে পড়েছে। অমুসলিমদের গোলামি করতে হচ্ছে। ইসলামি সমাজ ও অর্থনৈতিকব্যবস্থায় জাকাত যেমন গরিব-অসহায়দের অসহায়তা দূর করে। তেমনি ধনীদের অর্থনৈতিক চাকাকে আরো বেশি গতিশীল করে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close