নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ এপ্রিল, ২০২৪

ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে বুয়েটে ছাত্রলীগ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার পর প্রকাশ্যেই নেতাকর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান। গতকাল রবিবার দুপুরে কয়েকশ নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বুয়েটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ছাত্রলীগ। সেখানে ফুল দেওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে বুয়েট ত্যাগ করেন। এ সময় বুয়েটের মূল ফটক এবং বিভিন্ন হলের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবি ‘আলটিমেটাম’ দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

তিনি বলেন, বুয়েট প্রশাসনের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, অনতিবিলম্বে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। যে নিয়ম আপনারা শুরু করেছেন সেটি কালাকানুন, সেটি কালো আইন। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার কোনো আইন নাই। যদি থেকেও থাকে সেটি সংবিধানবিরোধী। আমরা আজ শহীদ মিনার থেকে বুয়েট প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিচ্ছি, অনতিবিলম্বে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। বুয়েট শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির সিট ফিরিয়ে দিতে হবে।

এদিকে, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় ছয় দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি তৃতীয় দিনে এসে ‘স্থগিত’ করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুয়ায়ী ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেননি শিক্ষার্থীরা। ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করেছেন। গতকাল ২০তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় একজন ব্যতীত সব শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০তম ব্যাচের ১ হাজার ২১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এক হাজার ২১৪ জনই পরীক্ষায় অংশ নেননি। এ থেকেই শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে ওই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে এর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে ফের আন্দোলন শুরু হয়।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। পরে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি ও স্লোগান লেখা প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন। তারা ‘এক দুই তিন চার, ডিএসডব্লিউ গদি ছাড়’, ‘আমি কে তুমি কে, আবরার আবরার’, ‘বুয়েট বাঁচাও বুয়েট বাঁচাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। তারা ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক মিজানুর রহমানের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিও তুলে ধরেন। পাশাপাশি গতকাল ও আগের দিনের টার্ম ফাইনালসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন।

এ প্রসঙ্গে (বুয়েট) উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছে, সেটা সঠিক না বেঠিক, সত্য কি না, তা যাচাই করতে হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যাচাই করবে। তথ্য সংগ্রহ করবে, ঘটনা সত্যি কি না। যদি কেউ অপরাধ করে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু কেউ অপরাধ না করলে তাহলেও ব্যবস্থা নিতে হবে। সুতরাং সঠিক তথ্য জানার জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাস না হওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। গতকাল দুপুরে বুয়েটে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য এ কথা বলেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করেছে। এ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, পরীক্ষা চলমান (ওপেন) আছে। পরীক্ষা শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী চলবে। যদি কেউ পরীক্ষা না দেয়, তাহলে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। উপাচার্য বলেন, ‘আমরা চাইব, তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) পরীক্ষা অব্যাহত রাখুক, যাতে ক্যারিয়ার নষ্ট না হয়।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যদি পরীক্ষা দিতে আসে, তখন বিবেচনা করা হবে। পরীক্ষায় দুজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল বলে।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালুর বিষয়ে ছাত্র সংগঠনের দাবির প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে উপাচার্য বলেন, তখন (২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যা) যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত (ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা) নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তাদের আবার উদ্যোগী হতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close