প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চিনির দাম বিশ্ববাজারে কম, দেশে বেশি

বিশ্ববাজারে গত কয়েকদিন ধরেই বাড়ছিল চিনির দাম। তবে চিনির শীর্ষ উৎপাদক ব্রাজিলে উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা জেগেছে। ফলে বিশ্ববাজারে সরবরাহ নিয়েও উদ্বেগ কমেছে। তাই এ ভোগ্যপণ্যের দরপতন ঘটেছে। গত বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে বিজনেস রেকর্ডার। এতে বলা হয়, অপরিশোধিত চিনির সরবরাহ মূল্য হ্রাস পেয়েছে ১.৪ শতাংশ। প্রতি পাউন্ডের দাম স্থির হয়েছে ২২.৯৮ সেন্টে। সাদা চিনির দাম কমেছে ০.৮ শতাংশ। প্রতি টনের মূল্য নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৫৮ ডলারে। তবে বিশ্ববাজারের এ পরিস্থিতি হলেও দেশে আসন্ন রোজা ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে বাড়ছে দাম।

বাজারসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগেও প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) চিনির পাইকারি দাম ছিল ৪ হাজার ৮৭০ টাকা। শুল্ক কমানোর ঘোষণা আসার পর দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়ে বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে মণপ্রতি ৪ হাজার ৯২০ টাকায়। কেজিতে দাম বেড়েছে ১ টাকা ৩৫ পয়সা। শুল্ক কমানোর ফলে কেজিপ্রতি প্রায় ১ টাকা কমার সম্ভাবনা থাকলেও তা বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে আগে নির্ধারিত (ফিক্সড কাস্টমস ডিউটি) শুল্ক ছিল টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা। এছাড়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৩০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) ও ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি)। অন্যদিকে পরিশোধিত চিনি আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ছিল ৬ হাজার টাকা এবং অপরিশোধিত চিনির মতোই ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৩০ শতাংশ আরডি, ২ শতাংশ এআইটি। এ হিসাবে চিনি আমদানিতে প্রায় ৬০ শতাংশ বা বর্তমান বাজারমূল্যে অন্তত কেজিপ্রতি ৪১-৪২ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হতো আমদানিকারকদের।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চারটি রোজার পণ্যের (চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর) শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ঘোষণায় অন্যান্য শুল্ক বহাল রেখে শুধু কাস্টমস ডিউটি টনপ্রতি ১ হাজার ৫০০ (অপরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে) থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। পরিশোধিত চিনির কাস্টমস ডিউটি ৩ হাজার থেকে কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর একই প্রক্রিয়ায় অপরিশোধিত চিনির কাস্টমস ডিউটি ৩ হাজার থেকে দেড় হাজার এবং পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে করা হয়েছিল ৩ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী রোজার প্রধান চার পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও এনবিআর লোকদেখানোর মতো করে শুল্ক কমিয়েছে। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন, এনবিআর রেগুলেটরি ট্যাক্স (নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক) কমিয়ে বাজারমূল্য কমানোর উদ্যোগ নেবে। কিন্তু কাস্টমস ডিউটি সীমিত আকারে কমিয়ে চিনির ক্রমবর্ধমান দাম কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তারা।

তারা জানান, ৪৭ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকার ফলে ডলারের বাড়তি মূল্য, মূল্যস্ফীতি, মজুরি-পরিবহনের বাড়তি খরচসহ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে যাওয়ার পরিবর্তে বেড়েছে। তাছাড়া ঋণপত্র খুলতে জটিলতা, দেশীয় চিনিকলের উৎপাদন অস্বাভাবিক কম, আমদানি সত্ত্বেও সরবরাহ কম থাকায় চিনির দাম বাড়ছে। শীত মৌসুমে চিনির চাহিদা কম ছিল। আসন্ন গ্রীষ্মকালীন মৌসুম ও রোজার বাড়তি ভোগকে কেন্দ্র করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমদানি খরচের একটি বড় অংশই ব্যয় হয় শুল্ক পরিশোধে। এনবিআর চিনির শুল্ক কমিয়েছে। যে পরিমাণ শুল্ক কমানো হয়েছে, সে অনুপাতেই খরচ নির্ধারণ করে লোকসান এড়িয়ে পণ্য বিক্রি করবে আমদানিকারকরা। আমদানি প্রক্রিয়ায় জটিলতা, ব্যাংকে ঋণপত্র খোলার সংকট সত্ত্বেও আমদানি আশাব্যঞ্জক। সরকারি উদ্যোগের পরও বাজারে দাম কেন বাড়ছে সেটি বোধগম্য নয়।

বাজারসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। তবে রোজা ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ বছর রোজা ও গ্রীষ্মকাল একই সময়ে হওয়ায় চাহিদাও বেশি থাকবে। কয়েক বছর আগেও দেশীয় ১৫টি চিনিকল থেকে এক-দেড় লাখ টন চিনি সরবরাহ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে দেশীয় চিনিকলে উৎপাদন ২০-২৫ হাজার টনে নেমে এসেছে। এ কারণে প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর হলেও ডলারের উচ্চমূল্য, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে চিনির বাজারে অস্থিরতা কমছে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ চিনি ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এনবিআর চিনি আমদানির শুল্ক কমিয়েছে খুবই কম। তাছাড়া দেশীয় মিলগুলো থেকে পর্যাপ্ত চিনি পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। রোজা ও গরমকালের জন্য বাড়তি চাহিদার চিনি না থাকায় দাম স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। শুল্ক কমানোর ঘোষণা আসার পর দাম না কমে উল্টো বেড়েই চলেছে চিনির পাইকারি বাজারে। সরকারের উচিত দেশীয় মিলের উৎপাদন বৃদ্ধি কিংবা আমদানি বাড়িয়ে ডিলার পর্যায়ে চিনি সরবরাহ বাড়িয়ে দেওয়া।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close