সাভার ও জাবি প্রতিনিধি

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ধর্ষণকাণ্ডে উত্তাল জাবি ক্যাম্পাস

ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জন রিমান্ডে * থানায় মামলা * সুলতানা কামালের নিন্দা

স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এ ঘটনার বিচার দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুরসহ ৪ আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রিমান্ডে নেওয়া অপর আসামিরা হলেন সাব্বির হাসান, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামান।

গতকাল রবিবার ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ছয়জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান। পলাতক আছেন ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত মো. মামুনুর রশিদ এবং স্বামীকে আটকে রাখায় সহায়তা ও মারধর করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আমরা সবাই এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি, এই অন্যায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে নৈতিকতা শেখায়, ধর্ষক তৈরি করে না। অথচ আজ তাদের নৈতিক অবক্ষয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’

গতকাল রবিবার দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়া থানায় এসব নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী।

আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামী আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকতেন মামুনুর রশিদ। শনিবার মুঠোফোনে ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীকে মামুন জানান, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে তার পরিচিত মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কিছুদিন থাকবেন। পরে তিনি ওই ব্যক্তিকে ক্যাম্পাসে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ভুক্তভোগীর স্বামী ক্যাম্পাসে এলে হলের একটি কক্ষে মুস্তাফিজ ও মুরাদের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। একপর্যায়ে মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে জানান, সাভারের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানে তারা কিছু টাকা পাবেন, তবে দোকানদার টাকা দিতে চাচ্ছেন না। ওই টাকার বিনিময়ে ভুক্তভোগীর স্বামীকে বাসার জন্য টিভি, ফ্রিজসহ অন্য আসবাব নিতে বলেন এবং সমপরিমাণ টাকা মামুনকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন ক্যাম্পাসে থাকবেন বলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে মামুনের কাপড় নিয়ে ক্যাম্পাসে আসার জন্য স্ত্রীকে বলতে বলেন। স্বামী তার স্ত্রীকে ক্যাম্পাসে ডেকে আনেন। রাত ৯টার দিকে ওই নারী ক্যাম্পাসে আসেন। ভুক্তভোগীর স্বামী, মামুন, মুস্তাফিজ ও মুরাদ মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আসেন। একপর্যায়ে মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে হলের এ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেঁধে মারধর করেন। পরে মুস্তাফিজ ও মামুন ওই নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ওই নারী ও তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনার বিচারের দাবিতে প্রথমে তারা আশুলিয়া থানায় এবং পরে সাভার মডেল থানায় যান।

এ ঘটনায় সাভার মডেল থানা ও আশুলিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে বলে জানান মো. আবদুল্লাহিল কাফী। তিনি বলেন, আসামিদের পালিয়ে যাওয়ায় সহায়তা করার অভিযোগে তিনজনকে ক্যাম্পাস থেকে আটক করা হয়। সাভার থানা এলাকা থেকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়। গতকাল রবিবার সকালে মামলা হলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পলাতক আসামি মুরাদ ও মামুনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এমএসএফের নিন্দা : সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা ধর্ষণের মতো ঘটনা দেশ ও জাতির জন্য চরম অবমাননাকর উল্লেখ করে অনতিবিলম্বে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। গতকাল রবিবার সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে বেঁধে রেখে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে স্ত্রীকে দলগত ধর্ষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ দুজন। তাদের সহযোগিতা করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এ ধর্ষণের ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তীব্র নিন্দা ও গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের দ্রুততার সঙ্গে আইনের আওতায় আনাসহ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের যথাযথ প্রয়োগে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা ধর্ষণের মতো এ ন্যক্কারজনক কাজ, মাদকের সংশ্লিষ্টতা এবং এর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সম্পৃক্ততা দেশ ও জাতির জন্য চরম অবমাননাকর বলে মনে করে। যদিও আমরা জানতে পেরেছি এ ঘটনায় পুলিশ প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এমএসএফ অনতিবিলম্বে জড়িতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার এবং ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close