শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ওপারে গোলাগুলি, তুমব্রু সীমান্তে আহত ৩

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অংশে ব্যাপক গোলাগুলি ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুর পর্যন্ত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গুলি ও বোমাবর্ষণ হয়েছে। বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। এতে ৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া তুমুল যুদ্ধের মুখে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। তারা সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। চৌকিগুলোয় সদস্য বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এদিকে, লাগাতার গোলাগুলি, মার্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লান্সার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকা। এ সময় মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন ৩ বাংলাদেশি নাগরিক। তারা হলেন কোনার পাড়ার বাসিন্দা প্রবীন্দ্র ধর, রহিমা বেগম ও শামশুল আলম। তাদের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কোনার পাড়ার কয়েকটি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যদিকে বিদ্রোহী গ্রুপের ব্যাপক গুলাগুলিতে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৫৩ জনেরও বেশি সদস্য বাংলাদেশের ভূখন্ডে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। সীমান্ত পথে আরো বেশি বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অবস্থান নিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাসরুকি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, মিয়ানমারের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্তে নিয়োজিত কিছু বিজিপির সদস্যরা তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্তে লাগুয়া স্কুলগুলো আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে। ঘুমধুম-তুমব্রু বেশ কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবির পাশাপাশি প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সীমান্তে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সীমান্তের দিকে নজর রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে সীমান্তের ১০০ গজ দূরত্বে থাকা মিশকাতুন নবী দাখিল মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মান্নান বলেন, রবিবার সকাল থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার অভ্যন্তরে গোলাগুলি বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত এলাকার বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, সীমান্তে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে প্রশাসন থেকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সীমান্তের দিকে নজর রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষের জের ধরে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close