নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪

জাপায় ভাঙন ঠেকাবে কে?

প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা) আবার ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, প্রার্থীদের খোঁজখবর না নেওয়া, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত না করাসহ নানা অভিযোগে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। নেতৃত্ব ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া দলটির ক্ষোভের আগুনে পানি ঢালবে কে এমন প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে। এই অবস্থায় জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ও কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে বহিষ্কার করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপা শীর্ষ নেতা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নির্বাচনে ভরাডুবি-পরবর্তী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের চলমান বিক্ষোভের আবহে চরম অস্থিরতা চলছে দলে। চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদপন্থিদের মধ্যে বিভক্তিও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

এদিকে, চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তরের সহস্রাধিক নেতাকর্মী দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নানা ইস্যুতে দলে অস্থিরতা চলছে। গণপদত্যাগ সেই অস্থিরতারই বহিঃপ্রকাশ। ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা হারানোর পর থেকে দলটিতে ভাঙাগড়া চলছে।

গতকাল রবিবার গুলশানে রওশন এরশাদ তার বাসায় এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রের ২০-এর ১ ধারা অনুযায়ী জি এম কাদের ও চুন্নুকে অব্যাহতি প্রদান করলাম।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির ক্ষতি মেনে নিতে পারি না। পার্টি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু দলকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।’ এ সময় দল থেকে বহিষ্কৃত ও অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন রওশন এরশাদ। মতবিনিময় সভায় ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি পাওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম, বহিষ্কৃত এবং রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ। আরো ছিলেন সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সারওয়ার মিলন, জিয়াউল হক মৃধা, ভাইস চেয়ারম্যান আমানত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল হক, খোরশেদ আলম, ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরী, জাতীয় ছাত্র সমাজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রফিকুল হক, এরশাদের ছেলে ও দলের যুগ্ম মহাসচিব সাদ এরশাদ।

রওশন এরশাদের কথা আমলে নিচ্ছি না- চুন্নু : রওশন এরশাদের বাসভবনে মতবিনিময় সভার পরে বনানীতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্ন। তিনি বলেন, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, তার পদ অলঙ্কারিক। সাংগঠনিকভাবে তার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। তার সঙ্গে যারা রয়েছেন তারা দল থেকে বহিষ্কৃত। তারা কী বলল না বলল, আমরা তা আমলে নিচ্ছি না।

রওশন এরশাদের ঘোষণার প্রসঙ্গে চুন্নু বলেন, এর আগেও তিনি দুইবার আমাদের বাদ দিয়েছেন, নতুন দল গঠন করেছেন। পরে সে ঘোষণা তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তাই তিনি কী বললেন, নলেজে নিচ্ছি না। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। দলের কেউ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নন।

দলটির বর্তমান ও সাবেক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাঙনের ইতিহাস এই দলে নতুন নয়। সব সময় কোনো না কোনো ইস্যুতে দলটিতে অস্থিরতা লেগেই থাকে। এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসক এরশাদও দলে ভাঙন, বিবাদ ঠেকাতে পারেননি। বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় বিরক্ত দলের নেতাকর্মীরা। বরং দিন দিন মূলধারার জাপায় অভ্যন্তরীণ সংকট আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ছোট ছোট দল আর উপদলে বিভক্তি-কোন্দল বাড়ছে দলটিতে।

জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপাই মূলধারা হিসেবে পরিচিত। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এই ধারায় এখন বেশ কয়েকটি উপধারা সৃষ্টি হয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর দেবর-ভাবির মধ্যে নেতৃত্বের কোন্দলে রওশনপন্থিরা পৃথক দল গঠনের চেষ্টায় রয়েছেন। গৃহবিবাদের জেরে এই অংশটি এবারের নির্বাচনেও অংশ নেয়নি। এর মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, প্রার্থীদের কোনো ধরনের সহযোগিতা না করাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন পার্টির পরাজিত প্রার্থীরা। তারা দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি করেন। ঘেরাও করা হয় বনানীর জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়। এরপর সারা দেশের পরাজিত প্রার্থীদের ডেকে বিশেষ সভাও হয়েছে।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলের একজন কো-চেয়ারম্যানসহ অন্তত চারজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেকের নাম দলের ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পরাজিতদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করেন দলপ্রধান জি এম কাদের। তবে পরাজিত প্রার্থীদের দখলে এখনো দলটির কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close