মিজান রহমান

  ০৮ জানুয়ারি, ২০২৪

তরুণ ভোটারে স্বস্তি

রাজধানীর তেজগাঁও সিভিল অ্যাভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন রোহান ও তার বন্ধু নিলয়। ভোট দিয়ে বের হয়ে সেকি উচ্ছ্বাস। ভোট দিয়ে হাতের চিহ্ন দেখিয়ে বললেন, প্রথমবার ভোট দিয়েছি। ভোট ভাবনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত যে, প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। ভোট সবার কাছে একটা অধিকার, এর সঠিক ব্যবহার করলাম।’ শুধু রোহান নন, রাজধানীতে অনেক ভোটকেন্দ্রেই তরুণদের দেখা গেছে ভোট দিতে। তাছাড়া গতবার যারা প্রথমবার ভোটার ছিলেন, সেই তরুণদেরও এবার ভোটে দিতে দেখা গেছে। নতুন ভোটারদের উপস্থিতি ছিল বেশি। সরেজমিন দেখা গেছে, এবার কাস্টিং ভোটের হার বাড়িয়েছে তরুণদের ভোট।

দেশে এবার কমবেশি ১২ কোটি ভোটার নিয়ে যে নির্বাচন হয়ে গেলে, প্রথমবার ভোট দেবেন এমন নবীনের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এর বাইরে আরো ১ কোটি ভোটার আছেন, যারা বয়সে তরুণ। বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জনের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে এ নবীনদের আলাদা গুরুত্ব দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীনরা। দলটির ইশতেহারেও কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, ভোটার উপস্থিতির প্রশ্নে নবীন ও তরুণ ভোটাররা বড় প্রভাবই ফেলছে। গতবার ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে ভয়ভীতি ও ইভিএমের গোলযোগে অনেকেই ভোট দিতে পারেননি বলে জানান তখনকার নতুন ভোটাররা। এবার ভোট হচ্ছে ব্যালটে, সে কারণে যান্ত্রিক গোলযোগের প্রশ্ন নেই। তাই ভোট দিয়েছে উৎসবের আমেজে।

প্রায় ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে তরুণ ভোটারের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এদের মধ্যে অনেকেরই ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা হবে এবারই প্রথমবার। গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে ভোটের গুরুত্ব এবং এবারের নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা জানান ইকবাল। তিনি জানান, এবারই প্রথম ভোটার হলাম। জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেব, সেজন্য একটু এক্সাইটেড। জাতীয় নির্বাচন হিসেবে যতটুকু নির্বাচন নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা থাকার কথা তা বর্তমানে অনুপস্থিত। তাছাড়া অনেকের কাছে ভোট দিতে অনীহা প্রকাশ করতেও দেখা যাচ্ছে। ফলে একটু ভিন্নরকম পরিবেশ দেখছি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবে এবং ভোট দেবে বলে আশা করি। আমি নিজে ভোট দেব এবং মানুষকে উদ্বুদ্ধ করব। কারণ ভোটদান হলো গণতন্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তর, যা নাগরিক অংশগ্রহণ এবং সামাজিক অগ্রগতির সারমর্মকে প্রতিনিধিত্ব করে। এর মূলে ভোটদানের কাজটি গণতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং দায়িত্বের প্রতীক।

অহিদুল ইসলাম অন্তর বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই আমার প্রথম অংশ নেওয়া। আমার ভোটে একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে এটা ছোট কোনো বিষয় নয়। ব্যাপক পরিসরে বলতে গেলে আমার জন্য আনন্দের ও উদযাপনের। এবারের জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক প্রত্যাশা ছিল। সবকিছুতে নীতিগত পরিবর্তন চায় তরুণরা। সে অর্থে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করি। দলমত-নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ হলে আনন্দের হতো, উদযাপনের হতো। প্রথম ভোট আমি আমার পছন্দের প্রার্থীকে দিতে দিতে চাই। ভোট জাতীয় অধিকার। আমার অধিকার। প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার চর্চা করা উচিত। একইসঙ্গে রাষ্ট্রের উচিত উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া।

এ চিত্র গেল তরুণদের। পাল্ট চিত্রও দেখা গেছে ঢাকা-৮ ও ঢাকা-১৪ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন, সেটাই বলতে পারছেন না পোলিং এজেন্টরা। জানেন না, প্রার্থীর দলের নামও। নৌকা প্রতীক ছাড়া বাকি প্রায় সব প্রার্থীর এজেন্টদেরই এ অবস্থা। ঢাকা-৮ আসনের আটটি কেন্দ্রে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের সঙ্গে পাশাপাশি বসে রয়েছেন তরীকত ফেডারেশনের ফুলের মালা প্রতীকের এজেন্টরা। এ সময় ফুলের মালার এজেন্টদের জিজ্ঞেস করলে তাদের বেশিরভাগই প্রার্থীর নাম বলতে পারেননি। কেউ কার্ড দেখে প্রার্থীর নাম বললেও পারেননি তার দলের নাম জানাতে। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের ২ নম্বর বুথে দায়িত্ব পালন করেন ফুলের মালার এজেন্ট এহসান। তিনি প্রার্থীর নাম বলতে পারলেও দলের নাম বলেন খেলাফত মজলিস। পরে ভালোভাবে দেখার জন্য নিজের পকেটে থাকা কাগজপত্র খুঁজতে থাকেন।

উদয়ন স্কুল কেন্দ্রের ফুলের মালার এজেন্ট তানজিলের কাছে প্রার্থী ও দলের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে আওয়ামী লীগের এক নেতা পাঠিয়েছেন। ফুলের মালার আরেক এজেন্ট আনিছাকে জিজ্ঞেস করলেও তিনি দলের নাম বলতে পারেননি। ঢাকা-১৪ আসনে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে জাসদ মনোনীত মশাল প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট দেখা যায়। তাদের অবস্থাও ঢাকা-৮ আসনের ফুলের মালা প্রতীকের এজেন্টদের মতো। মিরপুর শাহআলী মহিলা কলেজ কেন্দ্রে মশাল মার্কার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন নাহিদ হাসান পিয়াল। কোন প্রতীকের এজেন্ট জিজ্ঞেস করলে তিনি মশাল মার্কা বলে দাবি করেন। তবে প্রার্থী ও প্রার্থীর দলের নাম জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর দিতে পারেননি নাহিদ।

ক্যামেরা দেখলেই দীর্ঘ সারি, পরে নেই : একাধিক আসনের কেন্দ্রে দেখা গেছে, গণমাধ্যমের ক্যামেরা বা পর্যবেক্ষক দেখলে সেখানে কৃত্রিম সারি তৈরি করা হচ্ছে। তারা চলে গেলে যাচ্ছেন সারিতে দাঁড়ানো ‘ভোটাররা’। রাজধানীর বনানী মডেল স্কুল কেন্দ্রে দুপুর ১২টায় এক বিদেশি পর্যবেক্ষক আসার আগে তৈরি হয় ভোটারের দীর্ঘ সারি। তবে সেই পর্যবেক্ষক চলে যাওয়ার পরই কেন্দ্রটি প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। ঢাকা-১৭ আসনের চারটি ভোটকেন্দ্র বনানী মডেল স্কুলে। কড়াইল এলাকার নারী ভোটারদের জন্য এ চার কেন্দ্র। বেলা সোয়া ১১টায় বনানী মডেল স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, ভোটকেন্দ্রের বুথগুলোর সামনে কিছুসংখ্যক ভোটার রয়েছেন। ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ অনেক নারী ভোটার লাইন দিতে থাকেন। একপর্যায়ে লাইনটি স্কুল মাঠ পেরিয়ে সড়কে চলে যায়।

ভিন্ন দলের এজেন্টের অভাব : অনেক কেন্দ্রে নৌকা ছাড়া ভিন্ন দলগুলোর প্রার্থীদের এজেন্টদের পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে সকালে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করে। এ আসনের পাঁচটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। এ আসনে আট প্রার্থী থাকলেও তিনজন প্রার্থীর এজেন্ট ছিল প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে। বাকি পাঁচ প্রার্থীর কোনো এজেন্ট ছিল না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close