নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে

  ৩১ মার্চ, ২০২৩

ঈদবাজারে শীতলক্ষ্যা পাড়ে জামদানি পল্লী জমজমাট

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে দেশের একমাত্র জামদানিপল্লী। বংশপরম্পরায়ঐতিহ্যবাহী পোশাক শিল্পের শিল্পীরা তৈরি হয় এখানেই। পরিবারের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় গড়ে ওঠেন তাঁতশিল্পীরা। ভিন্ন ধরনের শাড়ি তৈরিতে আংশিক বা পুরোপুরি যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হলেও জামদানি তৈরি হয় তাঁতে।

এবার ঈদ সামনে রেখে জামদানিপল্লী বেশ জমজমাট। বর্তমান বাজারে জামদানি শাড়ির চাহিদার পাশাপাশি সালোয়ার কামিজ ও পাঞ্জাবির চাহিদাও বেড়েছে বেশ। এই চাহিদা মেটাতে শেষ সময়ে দিন-রাত কাজ করে চলেছেন তাঁতশিল্পীরা।

জানা যায়, জামদানির উৎপত্তি রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া গ্রামে। তবে জামদানিপল্লী এখন বিস্তৃত হয়েছে জেলার অন্য উপজেলাতেও। জামদানি বলতেই শাড়ির যে প্রচলিত ধারণা ছিল, এখন তার পাশাপাশি সালোয়ার কামিজ ও ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবিও তৈরি করা হচ্ছে। যার চাহিদাও রয়েছে বাজারে।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ সামনে রেখে তাদের বিক্রি-বাট্টা বেশ ভালো। দুই হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকার জামদানি শাড়ি তৈরি হয় এখানকার তাঁতগুলোতে। ক্রেতাদের সুবিধায় অনলাইনে সরাসরি তাঁত থেকে শাড়ি কেনার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

জানা গেছে, তেরছা, জলপাড়, পান্নাহাজার, করোলা, দুবলাজাল, সাবুরগা, বলিহার, শাপলাফুল, আঙ্গুরলতা, ময়ূরপ্যাঁচপাড়, বাঘনলি, কলমিলতা, চন্দপাড় ও ঝুমকাণ্ড এগুলো জামদানি শাড়ির নাম।

জামদানিপল্লী ঘুরে দেখা যায়, কারিগররা পাইকারি দরে জামদানি শাড়ি ও অন্যান্য পোশাক বিক্রি করছেন। মার্কেটে একই শাড়ির দাম রাখা হয় দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি। আর তাদের কাছে ৭০ হাজার, ৫০ হাজার, ২০ হাজার টাকা মূল্যের জামদানি শাড়ি দেখা গেছে। পাঞ্জাবি কেনা যাচ্ছে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়। দোকানিরা থ্রি-পিসের দাম হাঁকছেন এক থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। ফতুয়ার দাম চাওয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা।

রূপগঞ্জের জামদানি কারিগর আবুল হোসেন বলেন, যেসব শাড়ি বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর মূল্য খুচরা বাজারে অনেক বেশি। কেবল প্রচার ও প্রসারের কথা চিন্তা করে কারিগররা দাম কম রাখছেন। কারিগররা জানিয়েছেন, সাধারণ কাপড়ের চেয়ে জামদানির মূল্য বেশি হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এর ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রচুর সংখ্যক যন্ত্রের ব্যবহার। জামদানি প্রস্তুত করতে ১০১টি যন্ত্রের সাহায্য লাগে। কটন ও রেশমি সুতা দিয়ে পুরোপুরি হাতে তৈরি হয় কাপড়। এসব কারণে এ কাপড়ের মূল্য অন্যান্য কাপড়ের চেয়ে কিছুটা বেশি।

রূপগঞ্জের জামদানি বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা বায়েজিদ হাসেন বলেন, একসময় জামদানি শুধু সমাজের এলিট শ্রেণি মানুষের পণ্য ছিল। কিন্তু এখন জামদানি সবাই পড়ে। দিন দিন নারীদের কাছে জামদানির চাহিদা বাড়ছে। শুধু রূপগঞ্জে জামদানি শিল্প নগরীতে ঈদুল ফিতরে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার জামদানি বিক্রি হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close