নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং, কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি বন্ধ

ব্যঙ্গ করে নাম ধরে ডাকা, বদনাম করা, লাথি মারা, বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করা বা উত্ত্যক্ত করা, এমনকি অবহেলা বা এড়িয়ে চলে মানসিক চাপ দেওয়াকে বুলিং বা র‌্যাগিং হিসেবে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় এনে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুলিং বা র‌্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। এ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হলে তা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নীতিমালায় বলা হয়, বুলিং বা র‌্যাগিং হলো ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিকর বা বেদনাদায়ক এবং আক্রমণাত্মক ব্যবহার, যার প্রতি করা হয় তার নিজেকে তা থেকে রক্ষা করা কষ্টকর হয়ে যায়। বুলিং বা র‌্যাগিং শারীরিক বা মানসিক হতে পারে, একজন অথবা দলবদ্ধভাবে করতে পারে। বুলিং বা র‌্যাগিং ভিকটিমের পীড়া অথবা বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শুধু সহপাঠী বা শিক্ষার্থী নয় শিক্ষক-অভিভাবকদের দ্বারাও বুলিং বা র‌্যাগিং হতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র‌্যাগিংকারী শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীরা সাধারণত দুর্বল শিক্ষার্থীকে বেছে নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে নিজেদের জাহির করার লক্ষ্যে ভিকটিমকে হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করা এর প্রধান উদ্দেশ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র‌্যাগিং বিষয়টি বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে শিক্ষাজীবনে শিক্ষার্থীর সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেসব শিক্ষার্থী এর শিকার হয় তাদের মধ্যে বিষণ্নতা, ব্যঙ্গ, খিটখিটে মেজাজ এবং নিজেকে হেয় করে দেখার প্রবণতা তৈরি হয়। বুলিং বা র‌্যাগিং প্রতিরোধ না করলে সমাজে গঠনমূলক নেতৃত্ব ও সুনাগরিকের অভাব পরিলক্ষিত হবে। তাই শিক্ষার্থীরা বুলিং বা র‌্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে কি না বা কাউকে বুলিং বা র‌্যাগিং করছে কি না, উভয়দিকেই সজাগ থাকা সংশ্লিষ্ট সবার প্রয়োজন।

মৌখিক বুলিং বা র‌্যাগিং : কাউকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু বলা বা লেখা যা খারাপ কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করাকে বোঝাবে। যেমন- উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করা বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, শিস দেওয়া, হুমকি দেওয়া ইত্যাদি।

শারীরিক বুলিং বা র‌্যাগিং : কাউকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা, চড়-থাপ্পড়, লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেওয়া, থুথু মারা, বেঁধে কোনো বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বা বসে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া অথবা বাধ্য করা, কারো কোনো জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা, মুখ বা হাত দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করা ইত্যাদি।

সামাজিক বুলিং বা র‌্যাগিং : ব্যঙ্গ করে সামাজিক স্ট্যাটাস দেওয়া, কারো সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, প্রকাশ্যে কাউকে অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা জাত তুলে কোনো কথা বলা ইত্যাদি।

সাইবার বুলিং বা র‌্যাগিং : বন্ধুদের মধ্যে কারো সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটু কিছু লিখে বা অশালীন কিছু পোস্ট করে তাকে অপদস্থ করা।

সেক্সুয়াল বুলিং বা র‌্যাগিং : ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আপত্তিজনক স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা করা, ইঙ্গিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন, কয়েকজন মিলে জামা-কাপড় খুলে নেওয়া বা খুলতে বাধ্য করা, শরীরে পানি বা রং ঢেলে দেওয়া ইত্যাদি।

জাতিগত বুলিং বা র‌্যাগিং : জাতি, বর্ণ, গোত্র, ধর্ম, পেশা, গায়ের রং, অঞ্চল ইত্যাদি নিয়ে কাউকে অপমান ও হেয় করা।

অন্যান্য বুলিং : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র‌্যাগিং বা হেজিং বা ফ্যাগিং বা অন্য যে নামই হোক না কেন, তা অন্যান্য বুলিং নামে অভিহিত হবে।

বুলিং বা র‌্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি গঠন : বুলিং বা র‌্যাগিং প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং বা র‌্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করতে হবে। এই কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র‌্যাগিং হয় কি না তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। পর্যবেক্ষণের জন্য বুলিং বা র‌্যাগিং লগস তৈরি তৈরি করবেন, প্রয়োজনে প্রশ্নমালা ব্যবহার করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র‌্যাগিং প্রতিরোধে অভিযোগে বক্স রাখার ব্যবস্থা করবেন এবং অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নিয়মিত সভায় মিলিত হয়ে বুলিং বা র‌্যাগিং সংক্রান্ত মনিটরিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করবেন। এক্ষেত্রে বুলিং বা র‌্যাগিংকারী শিক্ষক অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রয়োজনীয় কার্যার্থে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠাবেন। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর বিদ্যমান বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবে। বুলিং বা র‌্যাগিংকারী শিক্ষার্থী হলে এর ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী বিধিমালা অনুয়ায়ী বুলিং বা র‌্যাগিংকারীকে সাময়িক বা স্থায়ী বহিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং ঘটনার গুরুত্ব সাপেক্ষে প্রচলিত আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। প্রতি ছয় মাস অন্তত একবার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এ বিষয় থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ আয়োজন করবেন।

অনেক সময় বাসায় বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজন, সাবলেটে থাকা ভাড়াটে অভিভাবকদের অনুপস্থিতিতে শিশুদের উত্ত্যক্ত করতে পারে। বাবা-মাকে বাসায় শিশুদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ হতে হবে যাতে সে অকপটে সব কথা বাবা-মায়ের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। তাই অভিভাবক সমাবেশে এ বিসয়ে অভিভাবকদের কাছে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দেবেন। যারা বুলিং বা র‌্যাগিং প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে তাদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close