প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ নভেম্বর, ২০২২

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কখনো ভুলব না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে দেশকে গড়ে তুলছে। আমার বাবার ডাকে অস্ত্র তুলে নিয়ে যারা এ দেশ স্বাধীন করেছেন তাদের সম্মান করা, মর্যাদা দেওয়াই আমাদের কাজ। দল-মত পৃথক থাকতে পারে কিন্তু তাদের অবদান আমি কখনো ছোট করে দেখিনি, অবহেলা করিনি। আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কখনো ভুলবে না। পিতা-মাতা-ভাইসহ স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে নিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় আমার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২২ উপলক্ষে তিনি সোমবার (২১ নভেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটানা তিনবার ক্ষমতায় থাকতে পেরেছি বলেই মানুষের জন্য কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যেসব মুক্তিযোদ্ধা একেবারে অবহেলিত ছিল সরকার তাদের খুঁজে বের করে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের ভাতার ব্যবস্থা করা, মারা গেলে রাষ্ট্রীয় সম্মানের ব্যবস্থা এমনকি তাদের দাফনের ব্যবস্থাও আমরা করছি। আমরা আপনাদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) অবদান চিরকাল মনে রাখব। আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় কাজ করছি। খবর বাসসের।

শেখ হাসিনা বলেন, তরুণ প্রজন্ম যদি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি দেখে বিজয়ের ইতিহাস জানতে পারে, তাহলে তারা অনুপ্রাণিত হবে এবং জানবে কীভাবে দেশের জন্য কাজ করতে হয়। এ লক্ষ্যে সরকার প্রতিটি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করছে এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেখানে জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, স্বাধীনতা ও পাকিস্তানি দখলদারির পর দেশ পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনী যেখানে আত্মসমর্পণ করেছে সেই জায়গা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে।

টানা ১৪ বছরের শাসনামলে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা ২০০৮-এর নির্বাচনে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম তা করতে পেরেছি। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতা জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি এবং সে সময়ই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল থেকে ২০৪১-এর বাংলাদেশ কেমন হবে তার পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও আমরা প্রণয়ন করেছি এবং তারই ভিত্তিতে আমাদের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলে প্রজন্মের পরপর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সেজন্য তার সরকার প্রণীত শতবর্ষমেয়াদি ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

দেশের প্রত্যেক গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে বিশ্ববাসী আর অতীতের মতো বাংলাদেশকে অবহেলার চোখে দেখে না উল্লেখ করে চলমান বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় দেশের সব পতিত জমিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার দেশকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কোভিড-১৯-পরবর্তী রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশনে উন্নয়নের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছে। কারণ এর ধাক্কায় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। যেসব জিনিস আমদানি করতে হয় যেমন ভোজ্য তেল, জ্বালানি তেল, গম ভুট্টা সেগুলোর দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি পরিবহন ব্যয়ও অনেকাংশে বেড়ে গেছে। তার পরও সরকার থেমে নেই। সরকার এগুলো অতিরিক্ত মূল্যে কিনে দেশের জনগণকে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং উন্নয়ন অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা যেন এই অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে চলতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে জাতির পিতার ‘এ দেশের মাটি ও মানুষ দিয়েই এ দেশকে গড়ে তোলা’র প্রত্যয়ের কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, এ আমিও বিশ্বাস করি এই মাটি ও মানুষ দিয়েই এ দেশ যে আমরা গড়তে পারি তা আমরা প্রমাণ করেছি। দেশ-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারীদের সম্মাননা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে সরকার প্রধান আরো বলেন, অন্তত এটুকু কাজ আমি করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ আর অসম্মানের চোখে দেখবে না। আর কখনো কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের বা তাদের পরিবারকে অবহেলা করবে না। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার যেন তাদের সম্মান নিয়ে চলতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close