নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ নভেম্বর, ২০২২

বুড়িগঙ্গায় দৃশ্যমান প্রথম রেলসেতু

আধুনিক রেলসংযোগের বিস্তৃতি বাড়িয়ে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে দ্রুত কাজ এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের। এরই মধ্যে রাজধানীকে রেলপথে পদ্মা সেতুর সঙ্গে যুক্ত করতে বুড়িগঙ্গায় তৈরি হয়েছে রেলসেতু। হাই-ফ্লাড লেভেল থেকে ২০ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রেখে তৈরি হচ্ছে এ সেতু। নৌপথ চালু রেখেই চলছে এর নির্মাণকাজ। বসে গেছে সব কটি স্প্যান।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের রেলসেতু ও ভায়াডাক্ট ইনচার্জ প্রকৌশলী আমিনুল করিম বলেন, প্রকল্পটি অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। সে চ্যালেঞ্জ ওভারকাম করে, সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমরা প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছি।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রথম পাথরবিহীন রেলপথ আমরা স্থাপন করছি। শুধু ফিটিংসগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করলে ট্রেন চলাচলের জন্য এটিকে সচল রাখা যাবে।

কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গে-ারিয়া হয়ে নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জ পয়েন্টে থেকে বুড়িগঙ্গা সেতু দিয়ে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও অতিক্রম করে আধুনিক রেলপথটি পদ্মা সেতু পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। প্রায় ৪০ কিলোমিটারের এই অংশের ১৭ কিলোমিটারই এলিভেটেড রেলপথ যেখানে বসছে পাথরবিহীন রেল ট্র্যাক। বাকি ২৩ কিলোমিটারে বসতে শুরু করেছে পাথরসহ রেললাইন।

এর আগে মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভাঙ্গা রেলস্টেশন সংলগ্ন প্রকল্প এলাকা থেকে ট্রেন যায় পদ্মা সেতুর কাছে। দুপুর পৌনে ১টার দিকে এই বিশেষ ট্রেনটি পদ্মা সেতুর কাছে পৌঁছায়। পরীক্ষামূলক ট্রেনটি বিশেষ আকৃতিতে নির্মিত একটি রেল ইঞ্জিনবিশেষ। এটি গ্যাংকার নামে পরিচিত।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চারটি জেলা মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, নড়াইল ও মাদারীপুরকে নতুন করে সরাসরি রেলসংযোগের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বরিশাল ও পায়রা বন্দরকেও সংযুক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। সর্বোপরি বাস্তবায়ন শেষে এ রেলব্যবস্থা হবে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রেললাইন পরিচালনায় থাকছে অত্যাধুনিক কম্পিউটার বেসড রিলে ইন্টারলকড সিগন্যালিং সিস্টেম, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দ্রুতগতির পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক রেললাইন তৈরির সব সুযোগও উন্মুক্ত থাকছে।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের অসংখ্য স্ট্রাকচারের মধ্যে বেশ কিছু রয়েছে স্টিল ট্রাস স্ট্রাকচার; মূলত বড় বড় সেতু এ কৌশলে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ধরনের স্টিল ট্রাস স্ট্রাকচারের মূল অংশগুলো নকশা ও মাপ অনুযায়ী সুদূর চীনে তৈরি করা হয় এবং সেখান থেকে সমুদ্রগামী জাহাজে দেশে নিয়ে আসা হয়। পাশাপাশি এগুলো স্থাপনের নানান সরঞ্জাম, যেমন উঁচু ক্রেন, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ড্রিলিং রিগ, গার্ডার ট্রাক ইত্যাদিও চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে। আর প্রায় ৫ হাজার দেশীয় নির্মাণশ্রমিক ও প্রকৌশলী এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে।

এদিকে, ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে চার কিলোমিটার পাথরবিহীন ও ২৮ কিলোমিটার পাথরসহ রেললাইন বসে গেছে। এই রেললাইন ভাঙ্গার পুরোনো রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত। স্টেশন ইনচার্জ অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তৌহিদ বলেন, কয়েক দিন আগে এই পথের কাজ শেষ হয়েছে।

পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচলের টার্গেট রয়েছে আগামী জুনে। মাওয়া রেলস্টেশনের অগ্রগতি প্রায় ৮৫ শতাংশ ও জাজিরা প্রান্তের পদ্মা রেলস্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৭৭ ভাগের বেশি। তবে রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেললিঙ্ক প্রকল্প শেষ হবে ২০২৪ সালে। আগামী ২০২৩ সালের ২৫ জুন ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close