নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

আশাবাদী পরিকল্পনামন্ত্রী

জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে

৭.৪৮% মূল্যস্ফীতির মানে হলো, গত বছরের জুলাই মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছর জুলাই মাসে তা কিনতে ১০৭ টাকা ৪৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। তবে এই মূল্যস্ফীতি গত মাসে সামান্য কমেছে।

সরকারি হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির পারদ সামান্য নেমেছে, বর্তমান সংকটের সময়ে যাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বুধবার (৩ আগস্ট) প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মাসে ‘পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে’ সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

অর্থাৎ, গত বছরের জুলাই মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছর জুলাই মাসে তা কিনতে ১০৭ টাকা ৪৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির হাত ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার গত জুন মাসে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে পৌঁছায়, যা নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেখান থেকে কমে জুলাই মাসে এই ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান তার দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, ‘আমার মনে হয় আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতির এই হার আরো একটু কমবে। আমি গণক নই, তবে আমার ধারণা কমার একটা লক্ষণ আমি লক্ষ করছি।’

তিনি জানান, জুলাই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের তুলনায় ০.৮ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। তবে গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ২ দশমিক ১২ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল।

সরকার এ বছর অর্থনীতির এ গুরুত্বপূর্ণ সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছে। অবশ্য পরিসংখান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে হিসাব প্রকাশ করে, প্রকৃত মূল্যস্ফীতি তার চেয়ে বেশি বলে অর্থনীতিবিদরা কারো কারো ধারণা।

মহামারির ধাক্কা সামলে অর্থনীতির গতি বাড়ায় গত বছরের শেষ দিক থেকেই মূল্যস্ফীতি ছিল বাড়তির দিকে। চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য বাড়তে শুরু করে। তার প্রভাব পড়ে অন্যান্য পণ্যেও।

এই পরিস্থিতিত টানা ৯ মাস ৬ শতাংশের বেশি রয়েছে মূল্যস্ফীতির হার। তাতে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের সংসার খরচ মেটাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, গত জুলাই মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ হয়েছে, যা জুন মাসে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ ছিল। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি জুন মাসে ছিল ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এক মাসের মাথায় তা বেড়ে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ হয়েছে।

গ্রামের মানুষকে মূল্যস্ফীতির কারণে ভুগতে হচ্ছে শহরের মানুষের চেয়ে বেশি। জুলাই শেষে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার সামান্য কমে ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ হয়েছে, যেখানে শহরে এই হার ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।

গ্রামে খাদ্য খাতে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ মূল্যস্ফতি হয়েছে জুলাই মাসে। আর খাদ্যবহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর শহরাঞ্চলে খাদ্য উপখাতে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত উপখাতে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছে না, এটা তার ‘প্রমাণ’।

অর্থনৈতিক পরিস্থিতির একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। পুরো অর্থনীতিটাকে এটা রিফ্লেক্ট করে এটা অর্থনীতির একটা প্রতিচ্ছবি। এই মূল্যস্ফীতি পুরো অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে।

আর কম আয়ের মানুষের ওপর এটা আঘাত করে বেশি। জনগণের সরকারকে এটা চিন্তা করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষের লাইফ ক্ষতিগ্রস্ত হয়- এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মান্নানের ভাষায়, জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি যতটা কমেছে, সেই হার ‘অনেক কম’ বলে মনে হলেও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এটাও ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’। শুধু যে কমেছে তা নয়, মাথার ছোবলটা একটু নুয়েছে। এটা আরো নুয়ে আসবে, বলেন তিনি। এই ধারণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের মধ্যেও ইউক্রেইন থেকে খাদ্য নিয়ে জাহাজ ছাড়া শুরু হয়েছে। অলরেডি জাহাজ ভেসে বেড়াচ্ছে, আমরাও পাব। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য পণ্যের দাম কিছুটা ফল করেছে। এই বেনিফিট এখন আরো আসবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close