নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ মে, ২০২২

মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ

সাজছে ৯ স্টেশন

টিকিট ছাড়া কেউ প্ল্যাটফর্মে যেতে পারবেন না। সেজন্য দোতলায় প্ল্যাটফর্মে উঠতে নির্ধারিত এস্কেলেটর কিংবা সিঁড়িও ব্যবহার করতে পারবেন না তিনি। আবার কেউ যদি কোনোভাবে টিকিট ছাড়া ট্রেন ভ্রমণ করেই ফেলেন; তবে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে বের হতে টিকিট দেখাতে না পারলে আর নিচে নামতে পারবেন না। এভাবেই স্বয়ংক্রিয় আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে সাজানো হচ্ছে রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো।

ঈদের আগে উত্তরা অংশে ‘উত্তরা উত্তর’ স্টেশন ঘুরে দেখার সময় স্টেশনের মূল অবকাঠামো নির্মাণ শেষে এখন সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি আর সরঞ্জাম লাগাতে দেখা গেছে। স্বপ্নের এ মেট্রোরেল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আংশিক চালু করতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে যাত্রী ব্যবস্থাপনার কাজ। এসব স্টেশনে যাত্রী ব্যবস্থাপনা করা হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে; যাত্রী চলাচলে থাকবে সব ধরনের নিরাপদমূলক ব্যবস্থা।

মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টা স্টেশনের এক্সিট, এন্ট্রি, টিকিটিং মেশিনসহ যত ধরনের যন্ত্রপাতি লাগবে সবকিছুই চলে এসেছে। এখন লাগানো শুরু হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি লাগানোর জন্য বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রায়ালও দেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের আগেই এই ৯ স্টেশনের সব কাজ শতভাগ শেষ হয়ে আমরা যাত্রী পরিবহনের জন্য শতভাগ প্রস্তুত হয়ে যাব। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং আগামী বছরের ১৬ ডিসেম্বর মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব হবে।

সবশেষ কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটারের এ উড়াল রেল প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রায় ৭৮ শতাংশ এবং উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের বাস্তবায়ন হয়েছে প্রায় ৯২ শতাংশ।

মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশে থাকবে ১৭টি স্টেশন; এগুলোর মধ্যে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁওয়ের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে এখন। বর্তমান যে ৯টি স্টেশনের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে সেগুলোর মধ্যে উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত উত্তরা উত্তর স্টেশনের কাজ হয়েছে সবচেয়ে বেশি বলে জানান প্রকল্পের উপব্যবস্থাপক মো. মাহফুজুর রহমান।

উত্তরা উত্তরা স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, নিচ থেকে স্টেশনের দুই পাশ দিয়ে ‘কনকোর্স’ (মেট্রো রেলস্টেশনে ঢোকার আগের স্থান যেখানে টিকিট কাউন্টার, টিকিট ও নিরাপত্তা যাচাই করা হয়) লেভেলে ওঠানামার জন্য সিঁড়ি, লিফট ও এস্কেলেটর রয়েছে। এসব সিঁড়ি, লিফট ও এস্কেলেটর ব্যবহার করে ট্রেন চলাকালীন কনকোর্স লেভেল দিয়ে রাস্তার এপার থেকে ওপারে যাওয়া যাবে।

নিচ থেকে দোতলায় বা কনকোর্স লেভেলে ওঠে দেখা যায়, ১৮০ মিটার প্রশস্ত কনকোর্স লেভেলে যাত্রীর টিকিট সংগ্রহের জন্য রয়েছে এক পাশে দুটি করে মোট চারটি টিকিট কাউন্টার এবং দুটি টিকিট ভেন্ডিং মেশিন অফিস।

সুপরিসর এ জায়গার মাঝখানে বসানো হচ্ছে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টার। এর পাশে রয়েছে অনিয়ম বা বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীদের জরিমানা আদায়ের আলাদা কক্ষ। স্টেশনের দুই পাশে নারী ও পুরুষের জন্য চার কোনায় চারটি আলাদা টয়লেট জোন। রয়েছে আলাদা নামাজের কক্ষ। উত্তরার এ স্টেশনে রয়েছে রেল চালকদের জন্য আলাদা বিশ্রামাগার এবং প্রকৌশলীদের জন্য আলাদা কক্ষ। স্টেশনের টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম) থেকে বিক্রয় কর্মীর সহায়তায় প্রতিবার ভ্রমণের পাশাপাশি মাসভিত্তিক বা বার্ষিক টিকিট বা পাস সংগ্রহ করা যাবে। এর পাশাপাশি রয়েছে টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, যেটি থেকে যাত্রী স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।

কর্মকর্তারা জানান, টিকিট সংগ্রহের আগ পর্যন্ত যাত্রী যেখানে থাকবেন, সেটা হবে স্টেশনের ‘নন পেইড’ এলাকা। যাত্রী মেশিনে টিকিট পাঞ্চ করে চলে যাবেন ‘পেইড’ এলাকায়। নির্ধারিত মেশিনে টিকিট পাঞ্চ ছাড়া কেউ পেইড জোনে যেতে পারবেন না।

এরপর যাত্রী পেইড জোন থেকে সরাসরি তিনতলায় অবস্থিত প্ল্যাটফর্মে যাবেন। এজন্য সেখানে দুটি সিঁড়ি, দুটি এস্কেলেটর ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য দুটি লিফট বসানো হয়েছে। নির্মাণাধীন সব স্টেশনেই থাকছে প্রায় এমন ব্যবস্থা।

এরপর তিনতলায় অবস্থিত ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্ল্যাটফর্ম। এখন সেখানে নির্ধারিত মাপে বসানো হচ্ছে ট্রেনে ওঠার গেট। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত এসব গেট ট্রেন এসে প্ল্যাটফর্মে থামার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। এরপর যাত্রী ট্রেনে ওঠার সুযোগ পাবেন। যেকোনো সময় যাত্রী প্রয়োজন হলে টিকিট ফেরত দিয়ে অর্থ ফেরতও নিতে পারবেন।

কনকোর্স ও প্ল্যাটফর্ম ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনে নির্মাণকাজে ব্যস্ত সবাই। আগামী এক মাসের মধ্যে স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণের সব কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে বলে জানান মাহমুদুল হাসান নামের এক কর্মী। প্রকল্পের উপ-ব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, সব স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের আকার একই হবে। আর বড় স্টেশনের কনকোর্সে চেইন শপের ব্যবস্থা থাকবে। সব স্টেশনে যাত্রীদের বসার আসন না থাকলেও উত্তরা উত্তরসহ কয়েকটি স্টেশনে সীমিত সংখ্যক আসন থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close