গাজীপুর প্রতিনিধি

  ২১ নভেম্বর, ২০২১

মেয়র জাহাঙ্গীরের প্রতিক্রিয়া

আমি ষড়যন্ত্রের শিকার

বঙ্গবন্ধু ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন, তিনি ‘ষড়যন্ত্রের’ শিকার। ষড়যন্ত্রকারীরা তার সম্পর্কে ভুলভাবে দলীয় সভাপতির কাছে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি ওই অডিও/ভিডিওর বিষয়ে কথা বলতে পারতাম, তবে প্রধানমন্ত্রী সবকিছু বুঝতে পারতেন। তখন তিনি হয়তো এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেন না।’ মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গতকাল শনিবার তার বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, ‘আমার অস্তিত্ব এবং প্রাণের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমার গার্ডিয়ান হিসেবে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বা দেবেন আমি মেনে নেব। তিনি যদি বলেন, বিনা কারণে, বিনা দোষে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে, আমি রাজি আছি। তাতে আমার কোনো দ্বিমত নেই। আমার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ- এ ব্যাপারে জীবনে কোনো দিন ছাড় দেই নাই, ভবিষ্যতেও দেব না।’

মেয়র আরো বলেন, আমাকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমার মায়ের কাছে আমি আবারও অনুরোধ করব উনি যেন পুনরায় বিবেচনা করে আমার ওপর যে বহিষ্কার আদেশ দিয়েছেন সেটা প্রত্যাহার করেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাই, প্রধানমন্ত্রী যেন আমাকে মাফ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ করার সুযোগ দেন। আমাকে যদি মনে হয় গ্রেপ্তার করবেন, বঙ্গবন্ধুর জন্য এবং আওয়ামী লীগের জন্য, প্রধানমন্ত্রীর জন্য যদি আমার জীবন দিতে হয় আমাকে বলবেন আমি আত্মসমর্পণ করব। আমাকে যেন কোনো মিথ্যার সঙ্গে জড়িত না করা হয়। আমার পক্ষে আইনজীবীও নিয়োগ করব না।’

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার নামে মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে বসলে ২ ঘণ্টা, ৩ ঘণ্টা আলোচনা হয়। সেসব আলোচনার মধ্যে ৩ মিনিট, ২ মিনিট, ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড করে কথা কেটে মূল কথা বাদ দিয়ে আংশিক কথা দিয়ে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। কিছু লোক আমাকে, আমার পরিবারকে এবং আমার সমর্থকদের মারার জন্য এবং প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সব সময় লেগেছিল।’

জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, ‘আমাকে তিন বছরের জন্য পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে বহিষ্কার করে আমার, আমার পরিবার এবং আমার অস্তিত্বের মধ্যে যে আঘাত দেওয়া হয়েছে সেটা আমি মানসিকভাবে মেনে নিতে পারছি না। আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমার ভুল হতে পারে। ভুলের জন্য আমি ক্ষমা চাই। প্রধানমন্ত্রী যেন আমাকে পুনরায় বিবেচনা করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেন বিবেচনা করে। আমি রিভিউ করতে চাই। আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে থাকতে চাই।’

মেয়র বলেন, ‘যে দিন থেকে আমি বুঝতে শিখেছি সেদিন থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। প্রধানমন্ত্রী আমার মায়ের মতো। তিনি আমার আদর্শের জায়গা। আমাকে যেন আবার পুনরায় বিবেচনা করেন এবং এই শহর গড়ার কাজে সহযোগিতা করেন।’

এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবশেবিষয়ক সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাউন্সিলর মো. রফিকুল ইসলাম, সদস্য কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিশ, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান তরুণ, সহ দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য রুহুল আমীন, কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, মাওলানা মনজুর হোসেন, মহানগর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আবদুল মজিদ বিএসসি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আবদুল কাদির মন্ডল, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন আহমেদ শান্ত বাবু, মহানগর মহিলা লীগের সভাপতি সেলিনা ইউনুস, সাধারণ সম্পাদক ফাহিমা আক্তার হোসনা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত দলীয় নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ী ছয়দানাস্থ মেয়রের বাসভবনে সামনে জড়ো হতে থাকে। মেয়রের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। দুপুর ১টার দিকে মেয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে ভবনের নিচতলায় নেমে এলে নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাড়িজুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়।

এর আগে শুক্রবার রাতে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কারের খবর গাজীপুরে ছড়িয়ে পড়লে জেলা শহর, টঙ্গী, পোড়াবাড়ী, সালনা, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর, চান্দনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে জাহাঙ্গীর আলমের বিরোধীরা আনন্দ মিছিল করেন। বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ ও পটকা ফাটিয়ে উল্লাস করেন।

উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলের প্রাথমিক পদ থেকে শুক্রবার বহিষ্কার করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close