গাজী শাহনেওয়াজ

  ২১ নভেম্বর, ২০২১

এমপিদের সহযোগিতা চাইল ইসি

আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলার ১ হাজার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট হবে। এখন চলছে প্রার্থীদের (চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত মেম্বার) নির্বাচনী প্রচার। এই নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন ইউপিতে ঘটছে আচরণবিধি লঙ্ঘন। দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনে দল সমর্থিত এমপিরাও প্রার্থীদের পক্ষে চাইছেন ভোট। ফলে আচরণবিধি সামলাতেই হিমশিম অবস্থা রিটানিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এসব কারণে বিব্রত নির্বাচন কমিশন (ইসি) পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা এমপিদের নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে। খবর ইসি, মাঠ অফিস ও প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দেওয়া অভিযোগ থেকে।

ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধির ২২(১) ধারায় বলা আছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচার বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। তবে তিনি ভোটার হলে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। ২২(২) বলা আছে, নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারি যানবাহন, অন্য কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ব্যবহার করতে পারবেন না। আচরণবিধিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামায় বিধি-নিষেধ থাকলেও তা মানছেন না আইন প্রণেতারা। এ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে ইসি।

এদিকে, গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেছেন, ‘দেশে বিভিন্ন জায়গায় ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা দেখা দিয়েছে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার সংসদীয় আসন আখাউড়া-কসবায় নৌকা প্রতীকে ইউপি নির্বাচন না দেওয়ার অনুরোধ জানাই।’

এই অবস্থায় বিধিবহির্ভূত নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার জন্য কিশোরগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনের এমপি মো. আফজাল হোসেনকে এলাকা ত্যাগের জন্য চিঠি দিয়েছে ইসি। গত শুক্রবারের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনি এলাকা ত্যাগ করে কমিশনকে সহায়তা করবেন, এটাই আশা করে কমিশন।’

এর আগে মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধেও ইউপি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। তিনি নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধনের নামে প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছিলেন।

শুধু এমপি আফজাল হোসেন নন; অনেক এমপিকে ইসি চিঠি দিয়েছে। রংপুর, খুলনা, টাঙ্গাইল ও সিলেট বিভাগসহ বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, থানা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, কালিগঞ্জের কয়েকটি ইউপিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছি প্রার্থীদের কাছ থেকে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম শাহতাব হোসেন বলেন, এই এলাকার মানুষ শান্ত ও ভদ্র। তবে অনেকেই নির্বাচনের প্রচারের নামে শোডাউন করছেন, যা আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল।

ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ছোটখাট অভিযোগ পাচ্ছি। রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে অনেককে জরিমানা করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন ছাড়া আর কোনো অভিযোগ এখানে নেই। মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনে যুক্ত হচ্ছেন না; এটা ইতিবাচক। এর আগে একজন এমপি ঘরোয়া সভায় একজন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন- এমন অভিযোগে মৌখিকভাবে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি সর্তক হন। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব খন্দকার হুমায়ুন কবীর প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কমিশনারদের কাছে কোথাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আসে সেটা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার নিদের্শনা দেওয়া হয়। বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আর রাষ্ট্রের অতি-গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিষয়ে অভিযোগ না এলেও নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখার জন্য চিঠি দিয়ে আচরণবিধি অনুযায়ী চলাফেরার জন্য চিঠি দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না কবার শর্তে ইসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, একজন এমপিকে সর্তক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আরো অনেকেই তালিকায় আছে। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন জানতে পারবেন। কমিশন থেকে কাউকে ছাড় না দেওয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close