সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

  ১০ জুলাই, ২০২০

এত বড় প্রতারক জানতেন না সাতক্ষীরাবাসী

সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদ এত বড়মাপের প্রতারক জানতেন না সাতক্ষীরার সাহেদ পরিবারের শোভাকাক্সক্ষীরা। সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর নিউমার্কেট এলাকায় ৫ বিঘা জমির ওপর বসতি ছিল সাহেদ পরিবারের। ছিল করিম মার্কেট নামের একটি বাণিজ্যিক মার্কেট। আজও মার্কেটটি করিম মার্কেট নামে থাকলেও পরিবর্তন হয়েছে মালিকানা। এখন সাতক্ষীরায় সাহেদ পরিবারের নেই কোনো স্থাপনা। তাদের বসতি স্থাপনার জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে আরেকটি বাণিজ্যিক মার্কেট।

১৯৪৭ সালের পর সাহেদের দাদা জমি বিনিময়ের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন। এরপর সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর নিউমার্কেট এলাকায় গড়ে তোলেন বসতি। সাহেদ পরিবারের শোভাকাক্সক্ষী সাতক্ষীরার ঘের ব্যবসায়ী বিশ^নাথ ঘোষ। করিম মার্কেটের শম্পা ফিশের মালিক। এই মার্কেটটি ছিল সাহেদের বাবা সিরাজুল করিমের। তবে গত ১০ বছর আগে এই মার্কেটটি বিক্রি করে দিয়েছেন সিরাজুল করিম।

জানা গেছে, সাহেদ করিমের দাদারা ছিলেন দুইভাই। ইকরামুল করিম ও ইমদাদুল করিম। ইকরামুল করিমের চার ছেলে সিরাজুল করিম, রফিকুল করিম আর দুই ভাইয়ের নাম জানা যায়নি। সিরাজুল করিমের একমাত্র ছেলে সাহেদ করিম। এই সাহেদ করিমই বর্তমানে সমালোচিত প্রচারক। যিনি রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক। করেনাভাইরাসের ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎসহ নানা দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তবে সাহেদের জন্ম সাতক্ষীরায় হলেও তার ভয়ানক এই প্রতারণার খবর জানতেন না সাতক্ষীরার কেউ।

সাহেদ পরিবারের শুভাকাক্সক্ষী সাতক্ষীরার ঘের ব্যবসায়ী ও করিম মার্কেটের শম্পা ফিশের মালিক বিশ^নাথ ঘোষ জানান, আমি তাদের ১৮০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ঘের ব্যবসা করতাম। পরে ২০০৫-০৭ সালের দিকে ঘেরের জমিগুলো পর্যায়ক্রমে বিক্রি করে দেয়। ১৮০ বিঘার মধ্যে আমি ৫০ বিঘা কিনেছি। এছাড়া দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গণি ৫০ বিঘা ও আরেক ব্যবসায়ী বশির আহম্মেদ ৫০ বিঘা কিনেছেন। বাকি ৩০ বিঘা স্থানীয় লোকজন বিভিন্নভাবে দখল করে নিয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালের দিকে করিম মার্কেটটিও বিক্রি করে দেয়। করিম মার্কেটটিও আমিসহ আরো দুজন ক্রয় করেছি।

সাহেদ করিমের দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের বাবা-চাচাদের সঙ্গে আমি মিশেছি। হাইস্কুল লেভেল পর্যন্ত সাহেদ সাতক্ষীরায় ছিল এরপর ঢাকাতে চলে যায়। যার কারণে বিস্তারিত আমি বলতে পারব না। তবে বর্তমানে রিজেন্ট হাসপাতালে করোনাকালে প্রতারণার যে ঘটনাটি শুনছি সেটি যদি সত্যি হয় তবে সেটি খুব দুঃখজনক। ২০-২৫ বছর আগে সাহেদ করিমের বিয়ে হয়েছিল সাতক্ষীরায়। তখন সাতক্ষীরায় এসেছিল। তারপর থেকে আমার সঙ্গে আর কখনো দেখা বা যোগাযোগ হয়নি। এরপর থেকে সে সাতক্ষীরায় এসেছে বলে জানা নেই।

করিম মার্কেটের আরেক পুরাতন ব্যবসায়ী এ কে ফিশের মালিক রুহুল কুদ্দুস। তিনি জানান, এই মার্কেটসহ এখানে ৫-৬ বিঘা জমির ওপর বসতি ছিল সাহেদ পরিবারের। তবে পর্যায়ক্রমে বিক্রি করতে করতে তাদের এখানে কোনো জমি নেই। মূলত তারা বাংলাদেশি নয় ভারতীয়। ভারত থেকে জমি বিনিময়ের মাধ্যমে সাতক্ষীরায় এসে বসতি গড়ে তোলেন। ১৯৬২ সালের জমির রেকর্ডে তার বাবার নাম রয়েছে। সাহেদ ঢাকাতে গিয়ে এত বড় প্রতারক হয়েছে সেটি অজানা ছিল। শুনেই হতবাক হয়েছি।

একই মার্কেটে আরেকজন মাছ ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা থেকেও শত শত কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়ে গেছে তারা। করোনা মহামারিতেও করোনার ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তদন্ত করলে তার প্রতারণার আরো খবর বেরিয়ে আসবে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের কেউ নন।

সাহেদ করিমের মা সাফিয়া করিম ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯৬ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি এই দায়িত্বপালন করেন। ২০০৬ সালে মারা যান সাফিয়া করিম। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নজরুল ইসলাম বলেন, সাফিয়া করিম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তার ছেলে সাহেদ করিম সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকান্ডে কখনো সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে কেন্দ্রের কোনো উপকমিটিতে রয়েছে বলে শুনেছি। শহরের করিম সুপার মার্কেট ছিল তাদের। সেটিও তারা বিক্রি করে চলে গেছেন। তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন সাতক্ষীরা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান সাহেদ করিম। এরপর ভর্তি হন ঢাকার পিলখানা রাইফেল স্কুলে। সেখান থেকে ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করেন। তবে এরপর আর লেখাপড়া করেছেন কিনা সে বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, সাতক্ষীরায় তাদের পরিবার বা বর্তমানে আলোচিত সাহেদ করিমের নামে সাতক্ষীরা থানায় কোনো অভিযোগ বা তথ্য নেই। তবে তার ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close