বিনোদন প্রতিবেদক

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

না ফেরার দেশে মাহফুজুর রহমান খান

চলে গেলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফার মাহফুজুর রহমান খান। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ২৫ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার আগে গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর গ্রিনলাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিস ও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন মাহফুজুর রহমান খান। তিনি একাধারে একজন সিনেমাটোগ্রাফার, অভিনেতা ও প্রযোজকও ছিলেন। তার জন্ম ১৯৫০ সালে ঢাকাতেই। ১৯৬৬ সালে ক্যামেরা শিক্ষানবিশ হিসেবে চলচ্চিত্রে তার আগমন। পরে হন অভিনেতা ও চিত্রগ্রাহক। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘আমার জন্মভূমি’। পরবর্তীতে তিনি একালের নায়ক, আলোছায়াসহ আরো বেশকিছু সিনেমায়ও অভিনয় করেন।

১৯৭২ সালে আবুল বাশার চুন্নু পরিচালিত ‘কাঁচের স্বর্গ’ সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফির মধ্য দিয়ে প্রধান সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে মেহেরবাণু, হারানো মানিক, সখী তুমি কার, জোকার, আপন ভাই, গাঁয়ের ছেলে, ভাই ভাই, জীবন-মৃত্যু, দোস্তী, ঝুমকা, সুখে থাকো, বদনাম, কালো গোলাপ, তালাক, অভিযান, নির্দোষ, সৎভাই, তিন কন্যা, তওবা, চাপা ডাঙ্গার বউ’, আনন্দ অশ্রু, হাজার বছর ধরে, স্বপ্নডানায়, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেটুপুত্র কমলা, আগুনের পরশমনিসহ অসংখ্য সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেন।

মাহফুজুর রহমান খানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীর। চলচ্চিত্রে আসার অনেক আগেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে আলমগীর ও মাহফুজের পরিচয়। তবে বন্ধুত্বের শুরুটা তাদের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় একসঙ্গে খেলাধুলা করতে গিয়ে। সেই থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মাহফুজ ও আলমগীরের বন্ধুত্বটা বেশ দৃঢ় ছিল। জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন আলমগীর। আলমগীর বলেন, “আমার অভিনীত প্রথম সিনেমা শ্রদ্ধেয় আলমগীর কুমকুম পরিচালিত আমার জন্মভূমি সিনেমায় মাহফুজ আর আমি একসঙ্গে অভিনয়ও করেছিলাম। এই সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফার ছিল মাহফুজ। সিনেমার ক্যামেরা ওপেন হয়েছিল ১৯৭২ সালের ২৪ জুন। আজ ভীষণভাবে মনে পড়ছে কুমিল্লাতে এই সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে ঘরের বাইরে খড়ের মধ্যে আমাদের দুজনকে বিছানা করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আমাদের রাতে ঘুমাতে হয়েছিল। শ্রদ্ধেয় আলমগীর কুমকুম তখন বলেছিলেন, এটা সহ্য করে টিকে থাকলে তারা মানুষ হবে। সেই মাহফুজ আর আমি আজকের ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু। প্রিয় সেই বন্ধু চলে গেল। ৮৫ সালে আমার প্রযোজনায় ‘ঝুমকা’ সিনেমার শুটিংস্পটে কক্সবাজারে মাহফুজ আর শিপ্রার প্রথম বিবাহবার্ষিকী উদ্যাপন করি। কত স্মৃতি আজ চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে। দোয়া করি আল্লাহ মাহফুজকে বেহেশত নসিব করুন, আমিন।”

নায়করাজ রাজ্জাকের ‘অভিযান’ সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। তার জাতীয় এই প্রাপ্তিতে সেসময় গত প্রায় ১৮ বছর আগে চলে যাওয়া তার স্ত্রী নীরাফাত আনাম ও তার মা রওশন আরা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন। মাহফুজুর রহমান সবসময়ই ভীষণ শ্রদ্ধা প্রকাশ করতেন তার গুরু আবদুল লতিফ বাচ্চু, সাধন রায়, রফিকুল বারী চৌধুরী ও কিউ জামানের প্রতি। অভিযানের পর মাহফুজুর রহমান খান সহযাত্রী, পোকামাকড়ের ঘরবসতি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, হাজার বছর ধরে, ‘আমার আছে জল’, ‘বৃত্তের বাইরে, ঘেটুপুত্র কমলা, আমার আছে জল সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। মাহফুজুর রহমান খান সর্বশেষ অপূর্ব রানা পরিচালিত ‘উন্মাদ’ সিনেমার কাজ করছিলেন। গেল ৩ নভেম্বর তিনি এই সিনেমার সর্বশেষ শুটিং করেন। তার প্রথম জানাজা বাদ জুমা চকবাজার শাহী মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বিকাল ৩টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিএফডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গত, মাহফুজুর রহমান খান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমাটোগ্রাফার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close