reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ মার্চ, ২০২৪

অনুমোদন ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ হোক

রাজধানীর বেইলি রোডে একটি ভবনে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৪৬ জনের প্রাণহানি ও ২০ জন আহত হয়। এ ঘটনার অন্যতম কারণ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন দুটি গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটছে। বাসাবাড়ি, রেস্টুরেন্ট অথবা যানবাহনে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারগুলোকে অত্যন্ত শক্তিশালী বোমার সঙ্গে তুলনা করা যায়। দেশের সর্বত্র ‘গ্যাস সিলিন্ডার’ নামক এই বোমার ব্যবহার থাকলেও এসব সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণে কারো যেন দায় নেই। এই সুযোগে বাজারে ঢুকে পড়ছে মানহীন সিলিন্ডার এবং এগুলোই প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বিস্ফোরণের ঘটনা এড়ানো সম্ভব। কিন্তু মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারিগরি ত্রুটির কারণেও অনেক সময় বিস্ফোরণ ঘটে। দেশে এখন সিএনজি ও এলপিজি গ্যাসের বহুল প্রচলন। যানবাহনে সিএনজি এবং রান্নার জন্য এলএনজি গ্যাসের মতো অতি দাহ্যপদার্থ ব্যবহার করা হয়। পাইপলাইন হোক বা সিলিন্ডার হোক তাতে গ্যাস সঞ্চালন, সরবরাহ লাইন, লাইনের সংযোগ এবং সংযোগস্থলে ব্যবহৃত এক্সেসরিস বা যন্ত্রাংশ শতভাগ টেকসই ও ত্রুটিমুক্ত হতে হয়। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার সময় একটি ভিন্ন ধরনের ‘মারক্যাপটান’ ব্যবহার করা হয়, গন্ধ পাওয়ার জন্য। এর ফলে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক করলে গন্ধ পেয়ে আঁচ করা সম্ভব হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এ ব্যবস্থা নেই। উপরন্তু গ্যাস সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার দায়িত্ব বিস্ফোরক পরিদপ্তরের। সিলিন্ডারে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের মানও খুঁটিয়ে দেখতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো দেশে সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষা করতে যেন কারো কোনো দায় নেই।

দুঃখজনক হলেও সত্য, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। অরক্ষিত অবস্থায় এসব সিলিন্ডার বিক্রি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। গতকাল শনিবার প্রতিদিনের সংবাদ থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অগ্নিনিরাপত্তা ছাড়াই অবাধে চলছে গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার বিক্রি। এসব সিলিন্ডার গ্রামীণ জনপদের মানুষ ব্যবহার করছে। কোনো ধরনের অনুমোদন না থাকলেও শ্যামনগর পৌরসভাসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের হাটবাজার ও রাস্তার পাশের দোকানে বিক্রি হচ্ছে এসব গ্যাস সিলিন্ডার। দোকানের সামনে এমনকি ফুটপাতে সিলিন্ডার ফেলে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। মুদি দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান এবং চা দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে সিলিন্ডার। এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বা অগ্নিনিরোধক নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রচণ্ড রোদে রাস্তার পাশে গ্যাস সিলিন্ডার অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখায় যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ও প্রাণহানির আশঙ্কা করছে উপজেলা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এই চিত্র শুধু শ্যামনগরের নয়, সারা দেশেরই।

সড়কের পাশে সাজিয়ে রেখে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা খুব বিপজ্জনক। যত্রতত্র দাহ্যপদার্থ বিক্রির কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। যেকোনো সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ এবং অনুমোদন ছাড়া যত্রতত্র বিক্রি ঠেকাতে পারলে বিস্ফোরণের ঘটনা এড়ানো সম্ভব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদারকি করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close