reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ মার্চ, ২০২৪

ঐতিহাসিক সাতই মার্চ আজ

স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বলতম দিন

ঐতিহাসিক সাতই মার্চ আজ। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিসংবাদিত এবং অবিস্মরণীয় একটি দিন; বাঙালির গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বলতম দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার গগনবিদারি স্লোগান আর মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে রচিত হয় রাজনীতির এক ঐতিহাসিক মহাকাব্য। সেদিন মুজিব বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। উচ্চারিত এই শব্দাবলির মধ্য দিয়ে কার্যত তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সাতই মার্চের এমন ঘোষণা শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব ছিল। মাত্র ১৯ মিনিটের সেই ভাষণ জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। তখন থেকেই যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। এরপর ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ যে বিজয় অর্জন করেছিল, বলতে গেলে সাতই মার্চে তার বীজ রোপণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুধু রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের একটি সম্ভাবনাও তৈরি করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সে রকমই একটি ঘটনা, যার তুলনা আমাদের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। আর এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে সেই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান প্রেরণা ছিল বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো বটেই, স্বাধীনতার পরও সেই ভাষণ আমাদের প্রাণিত ও উজ্জীবিত করে চলেছে। এ ভাষণ হলো সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বজ্রতুল্য ঘোষণা।

বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাঙালিদের যে করতে হবে তাও তার দূরদৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল বহু আগে। ৭ মার্চের ভাষণে সেই দিকনির্দেশনাও স্পষ্ট। ভাষণে তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।’ পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশে ভাষণে উচ্চারিত হলো সাবধানবাণী- ‘আর আমার বুকের ওপর গুলি চালানোর চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।’ দিলেন জনযুদ্ধের ডাক, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। আজকের দিনে মহান এই নেতার প্রতি জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

সাতই মার্চ বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসে ও জাতীয় জীবনে এক সুদূরপ্রসারী গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করছে বলেই আমাদের বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুধু বাঙালি জাতিকে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান নয়, এটি সব জাতির মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিকনির্দেশনা। তাই আজকের প্রজন্মের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মূল্যবোধের সেতুবন্ধ তৈরি করে দিতে হবে, যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তা ধারণ করতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close