reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২

হেমন্তের বাতাসে দোল খায় আমনের সোনালি শিষ

দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। হেমন্তের মিষ্টি বাতাসে দোল খাচ্ছে আমনের সোনালি শিষ। সোনালি ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাঁধে করে, কেউ ভ্যানে আবার কেউ গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। ভাবতেই ভালো লাগছে এমন দৃশ্য। তবে এটি কল্পনায় নয়, বাস্তবেই এমনটি দেখা গেছে নেত্রকোনার মদন উপজেলায়। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সোনালি ধান আমন। কৃষকরা খুশিমনে ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানে নিসর্গের কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার উদ্ধৃতি প্রাসঙ্গিক। প্রকৃতি; হেমন্ত; সোনালি ধান; ধান কাটা বা নবান্ন- এসবের বর্ণনা তার থেকে আর কেইবা বেশি ভালো দিতে পেরেছেন! তিনি লিখেছেন- ‘প্রথম ফসল গেছে ঘরে/হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু শিশিরের জল;/অঘ্রাণের নদীটির শ্বাসে/হিম হয়ে আসে/বাঁশপাতাণ্ডমরাঘাস-আকাশের তারা!/বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা!/ধানক্ষেতে-মাঠে/জমিছে ধোঁয়াটে/ধারালো কুয়াশা!’ জীবনানন্দের রূপসী বাংলায় সত্যিই এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ দৃশ্য মন ভরানোর; এ দৃশ্য মন ভোলানোর।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বজুড়ে চলছে অস্থিরতা। উন্নত দেশগুলো যেখানে সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খায় সেখানে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর কী অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশেরও কিছুটা দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। কারণ বিশ্বজুড়ে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার আঁচ আমাদের গায়েও লাগবে না তা কি বলা যায়? কিন্তু যে দেশ এত সম্ভাবনাময়, সেখানে দুশ্চিন্তা ভর করে কীভাবে! বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সবাইকে চাষাবাদ বাড়াতে বললেন। কোনো জমিই পরিত্যক্ত না রেখে যেন ফসল ফলানো হয় সেই তাগিদ দিচ্ছেন বারবার। লক্ষ্য একটাই- বাংলাদেশ যেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকে; কোনো সংকটে না পড়ে। গত শনিবার আশাবাদী হওয়ার মতোই একটা খবর ছাপা হলো প্রতিদিনের সংবাদে- গত বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো, খুশি কৃষকরাও। এবার বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় গতবারের চেয়ে বেশি জমি চাষ করতে পেরেছেন তারা। ফলনও ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। তবে আমন চাষ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। শতকরা ৩৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি সাড়ে পাঁচ টন।

চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে প্রতি কেজি চাল ৪২ ও ধান ২৮ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ধানের দাম কেজিতে এক টাকা ও চালের দাম ২ টাকা বাড়িয়ে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এছাড়াও এবার সরকারিভাবে কৃষক ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে তিন লাখ টন ধান ও পাঁচ লাখ টন সেদ্ধ চাল কেনা হবে। সরকারের এটা ভালো সিদ্ধান্ত। আমরা মনে করি, এতে কৃষকরা লাভবান হবেন; উৎসাহীও হবেন। কারণ প্রায়ই শোনা যায় কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পান না। এই বিষয়টিতে যেন বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়। যাদের পরিশ্রমে দেশের শস্যভা-ার সমৃদ্ধ হচ্ছে, মানুষের মুখে ফুটছে তৃপ্তির হাসি। তারা যেন কোনোভাবে বঞ্চিত না হয়, বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। আর এটাই অমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close