reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ মে, ২০২২

শিক্ষায়তনে যথোচিত শিক্ষা নিশ্চিত করুন

মানবিকতা নামের একটি শব্দের ব্যবহার আমরা অহরহ দেখি। কিন্ত সেই মানবিকতার পরিধি যে দিন দিন সংকুচিত ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, সেদিকে আমাদের নজর সামান্যই। কারণ আমাদের অনেকেই সেই দোষে দুষ্ট। মুখে যা বলি, তা বাস্তবায়ন করি না, এমন কি বিশ্বাসও করি না। আবার অন্যকে জ্ঞান দিতে সিদ্ধহস্ত এই সমাজের অনেকেই নিজের বেলায় তার ছিটেফোঁটাও পালন করেন না। এটা নির্মম পরিহাস। শিক্ষকরা সমাজের শ্রেষ্ঠ সন্তান। যাদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। আর অবৈধ বৈষয়িক সুবিধার জন্য সেই শিক্ষকের হাতেই নির্যাতনের শিকার হলেন শিক্ষার্থী। এই নৈতিক স্খলনের পরিমাপ কোন মাপকাঠিতে করা হবে তা বলা মুশকিল। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কোচিং প্রথা শিক্ষাব্যবস্থায় এক দুষ্ট ব্যাধি। এর থেকে শিক্ষার্থীদের পরিত্রাণ প্রয়োজন।

বলা সংগত, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন নানা ধরনের অনৈতিক বাণিজ্যের উর্বর ভূমি হয়ে দাঁড়িয়েছে, এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কোচিং বাণিজ্য। যাকে কেউ কেউ মহাবাণিজ্য নামে আখ্যায়িত করছেন। কারণ আর কিছুই নয়, শিক্ষা যেমন জাতি গঠন তেমনি ব্যক্তিক জীবন গঠনেরও ভিত্তি। সে ভিত্তিই যদি দূষিত হয় তাহলে সুন্দর সমাজ গঠনের সুযোগ থাকে কোথায়? পরিণাম ওই একটাই- নীতি-নৈতিকতাহীন সৎশিক্ষাভ্রষ্ট জাতি। সাধারণভাবে এটাই সত্য হয়ে দাঁড়ায়। কোচিং নিয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোচিং না করায় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির রেডিওলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোলাইমান হোসেনকে গেস্ট টিচার সাঈদী হাসানের নির্দেশে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারই অনুগত আরো কিছু শিক্ষার্থী লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন স্থান থেঁতলে দিয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় রাতেই তাকে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এটা তো একটি ঘটনামাত্র। বলতে গেলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই এখন কোচিং গ্রাসে আচ্ছাদিত। সম্প্রতি প্রকাশিত গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোচিং বেআইনি হলেও সমাপনী পরীক্ষা চালুর পর তা বেড়েছে। গত বছর ৮৬.৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে হয়েছে। আর ৭৮ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে কোচিং ছিল বাধ্যতামূলক।

বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষকদের অনেকেই ক্লাসে ছাত্রদের শিক্ষাদানে তাদের জ্ঞান ও মেধা পুরোপুরি ব্যয় করেন না। কারণ তাহলে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। বিরাজমান অবস্থায় কোচিং বাণিজ্য এতটা ব্যাপক যে, কোচিং এখন আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা পেয়ে যাচ্ছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এ কথা বলা অযৌক্তিক হবে না, এই অনৈতিক পেশা থেকে শিক্ষকদের সরে আসতে হবে। কারণ নীতি-নৈতিকতায় দায়বদ্ধ শিক্ষকরা জানেন শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল অংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বহনের পাশাপাশি কোচিংয়ের ব্যয়ভার বহন করা তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। শুধু সন্তানদের মানুষ করার অভিপ্রায়ে এই যন্ত্রণা নীরবে সইতে হয় অভিভাবকদের। তাই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার শিক্ষার সবপর্যায়ে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া। নিশ্চিত করুন শিক্ষায়তনে যথোচিত শিক্ষার- আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close