reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

নির্বাচনে ভোটারের গুরুত্বই শেষ কথা

জীবনের প্রতিটি স্তরে ‘প্রয়োজন’ এমন একটি শব্দ, যার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রয়োজনের সঙ্গে গুরুত্বের সম্পর্কও নিবিড়। প্রয়োজন বাড়লে গুরুত্বও প্রসারিত হয়। পৃথিবীর সর্বত্রই এ ব্যাপারে একই দর্শন। সমাজে অপ্রয়োজনীয় বস্তুর কোনো কদর থাকে না। শুধু বস্তুর ক্ষেত্রেই নয়, মানুষের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। তাই অপ্রয়োজনীয় বস্তুর শেষ আশ্রয়স্থল ডাস্টবিন। খুব কঠিনভাবে বলতে গেলে, মৃত্যুর পর সমাজে মানুষের আর কোনো প্রয়োজন থাকে না। সম্ভবত সে কারণেই সৎকারের ব্যবস্থা।

একইভাবে ভোটের সময় এলে ‘প্রয়োজন’ শব্দটির আকাশছোঁয়া উচ্চতা বাড়ে। প্রার্থীরা ছোটেন ভোটারের পেছনে। বল থাকে ভোটারের কোর্টে। তাই ভোটের সময় গুরুত্বটাও যায় বেড়ে। কিন্তু হায়; ভোট শেষ হওয়ার পর সে গুরুত্ব আর থাকে না। ভোটাররা তখন অপাঙ্তেয় জনতার কাতারে। এটিই বাস্তবচিত্র এবং সবারই জানা। তবু ভোট এলেই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জেতানোর চেষ্টা করি। বিজিত প্রার্থীকে আর পেছনে তাকাতে হয় না। অন্তত দু-চার-পাঁচ বছরের জন্য। এ সময়ের জন্য ভোটারদের গুরুত্বে ধস নামে। ডাস্টবিনে যেতে না হলেও মানবেতর জীবনেই ফিরতে হয়। গুরুত্বহীন হয়ে পড়ায় তাদের খোঁজ নেওয়ার মতো কেউ থাকে না। বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্ষেত্রের চিত্রই এটি। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তাণ্ডও নয়। উদাহরণ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম উল্লেখ করলে সম্ভবত ভুল উচ্চারিত হবে না।

আগামীকাল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রচার-প্রচারণাও তুঙ্গে। মেয়র পদে ভোটযুদ্ধ হবে মূলত আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং স্বতন্ত্র তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে। তবে মেয়র পদে আরো পাঁচজন অংশ নিয়েছেন। অবশ্য তাদের নিয়ে তেমন একটা আলোচনা নেই, যতটা আছে তৈমূর-আইভী নিয়ে। প্রতিবারের মতো এবারও আছে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ। বিষয়টি নতুন কিছু নয়। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। তবে নারায়ণগঞ্জের এবারের নির্বাচনে কাদা ছোড়াছুড়ির ঘটনা নেই, যা অনেকের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। আমরা আশা করতেই পারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচন কলুষমুক্ত হবে। ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোট দেওয়ার অধিকার অর্জন করবেন।

ফলাফল কী হবে, বলাটা কঠিন। তবে তুলনামূলক বিচারে অনেকের মতে, সেলিনা হায়াৎ আইভী যোগ্যতার দাবিদার। অনেক দিন ধরে তিনি মেয়র পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। নিজ গুণে তিনি তার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচারও নেই। দুর্নীতির অভিযোগ নেই। সততাই তাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। এটি তার অর্জন। সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার প্রশ্নে রাজনীতিতে এ অর্জন খুবই জরুরি। পাশাপাশি তৈমূর আলম খন্দকারও একজন সজ্জন প্রার্থী। এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমতও নেই। তবে ড্রাই টেস্টে আইভী একজন উত্তীর্ণ প্রার্থী আর তৈমূর আলম খন্দকারের ড্রাই টেস্ট হয়নি। তাই বিশ্বাসযোগ্যতার মাপকাঠিতে আইভীর পাল্লাই ভারী বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

আমরা মনে করি, নির্বাচনে যিনি জিতবেন তাকেই স্বাগত। তবে একটি অনুরোধ থাকবে, নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পর অনুগ্রহপূর্বক ভোটারদের কথা মনে রাখবেন। দেয় প্রতিশ্রুতি পালনে এগিয়ে আসবেন। মনে রাখবেন- ডাস্টবিন যেন তাদের শেষ আশ্রয় না হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close