reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

অপরিকল্পিত কাজের ফল নেতিবাচক হতে বাধ্য

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একটি লক্ষ্য থাকে। আর সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই গড়ে উঠে পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার ডানায় সওয়ার হয়ে মানুষ জয় করছে মহাবিশ্ব। পরিকল্পনাহীন জীবন অনেকটা গিনিপিগ জীবনযাপনের মতো। যাদের পরিকল্পনার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। যাদের চিন্তা-চেতনা, জন্ম-মৃত্যু এবং ভোগের বৃত্তেই সীমাবদ্ধ। প্রকৃতিগতভাবেই তা তারা পেয়ে থাকে। কিন্তু মানুষ! সে তো প্রকৃতিকে জয় করে, তাকে শাসন করার মধ্য দিয়েই নিজের ভবিষ্যৎ রচনা করে। এজন্য তাকে চিন্তা করতে হয়, প্রয়োজন পড়ে পরিকল্পনার। সঠিক পরিকল্পনা একটি জাতিকে কোথায় ওঠাতে পারে, পশ্চিমা বিশ্বই তার জীবন্ত উপমা।

একসময় তুরস্ক পৃথিবী শাসন করেছে। শাসনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনায় ঘাটতি থাকায় বা নেতিবাচক পরিকল্পনার কারণে তুরস্ক আজ আর সে অবস্থায় নেই। একটি বাগানকে নান্দনিক রূপ দিতেও সুন্দর একটি পরিকল্পনার প্রয়োজন। একইভাবে একটি শহরকে নান্দনিক করে গড়ে তুলতে সঠিক পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা শহরকে সে রকম একটি অপরিকল্পিত নগর হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। গত ১০ বছরে শহরের প্রান্তসীমায় অনিয়ন্ত্রিত বসতি এবং অপরিকল্পিত ঝুঁকিপূর্ণ নগরায়ণে কৃষিভূমি ও বনজ সম্পদ এবং জলাশয় ধ্বংস হচ্ছে। বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে সামাজিক বৈষম্য। অধিকাংশ মানুষ পাচ্ছে না নাগরিক সুবিধা। কমছে উপার্জন সক্ষমতা। বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে প্রিয় নগরী। চিত্রটি শুধু ঢাকারই নয়, গোটা দেশের সর্বত্র একই চিত্র।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা (ইউআরপি) ডিসিপ্লিনের এক গবেষণা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছে, বাংলাদেশের শহরগুলোর সামাজিক বিভাজন ও শহরতলির পরিবর্তন উদ্বেগজনক। প্রতিবেদন বলছে, ঢাকা শহরের আয়তন ৩০৭ বর্গকিলোমিটার। এখানে আশঙ্কাজনক হারে নগরায়ণ হচ্ছে। গত ৩০ বছরে ঢাকার আশপাশে ২৫৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে অপরিকল্পিত বসতি গড়ে উঠেছে। একই সময়কালে খুলনায় বেড়েছে ১৮ বর্গকিলোমিটার, যেখানে মোট আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার। ঢাকায় গড়ে প্রতি বছর ৮ শতাংশ হারে নগরায়ণ হচ্ছে, খুলনায় যে হার ৫ শতাংশ। এই অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকা হারিয়েছে ২৩৪ বর্গকিলোমিটার কৃষিজমি এবং ৩২ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল ও জলাভূমি। অপরদিকে খুলনা হারিয়েছে প্রায় ৪২ বর্গকিলোমিটার কৃষিজমি ও প্রায় ৫ বর্গকিলোমিটার জলাশয়। এখানে সুপেয় পানি, পয়োনিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সড়ক যোগাযোগের বেহাল দশা। শহরের প্রান্তিক এলাকায় লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। ফলে শহরের ভেতরের ঘনবসতিপূর্ণ প্রায় ৭০ শতাংশ মহল্লা আরো ঘিঞ্জি হয়ে উঠছে। হারাচ্ছে বাস উপযোগিতা। এর সবকিছুই পরিকল্পনাহীন উন্নয়নেরই প্রতিচ্ছবি।

সুযোগণ্ডসুবিধার ক্ষেত্রে ঢাকা শহর অনেক বেশি বিভাজিত। আয়ের ভিত্তিতে ঢাকা শহর ৮ ও খুলনা শহর ৫ শ্রেণিতে বিভাজিত। উভয় শহরে নাগরিক সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যও চোখে পড়ার মতো। ঢাকার ক্ষেত্রে ১৭ শতাংশ বাড়িতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। খুলনায় এচিত্র আরো ভয়াবহ। গত ২০ বছরে ঢাকা শহরে সরকারি উদ্যোগে কোনো বিদ্যালয় গড়ে উঠেনি। পাশাপাশি মানসম্মত স্কুলের সংখ্যা খুবই কম। গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসম্পন্ন শহর গড়ে তুলতে সরকারের জন্য পরিকল্পনাই বড় চ্যালেঞ্জ। বিভাজন কমানো দরকার। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিষয়টি খুবই জরুরি। পরিকল্পনা বাস্তবতার আলোকে ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে তৈরি করতে হবে। সব কথার শেষ কথা- ঢাকা শহরকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।

আমরাও বিশেষজ্ঞদের মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলতে চাই, ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close