মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

  ১৬ এপ্রিল, ২০২১

দৃষ্টিপাত

পবিত্র রমজানের বিশেষ আমল

করোনা মহামারির মধ্যেই এসেছে ইবাদতের বসন্তকাল মাহে রমজান। সওয়াবের ভরা মৌসুম। রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। প্রিয় রসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান বরকতময় মাস, তোমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে। এ মাসে আল্লাহ একটি রাত দান করেছেন, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো আল্লাহর মহাকল্যাণ থেকে’ (ইবনে মাজাহ)। এ মাসে রয়েছে অনেক আমল। আমরা কয়েকটি বিশেষ আমল উপস্থাপন করছি। আমলগুলো কবুল হবে যদি নিচের এই দুই শর্ত পাওয়া যায়। এক. সহি নিয়ত ও ইখলাস। একনিষ্ঠতার সঙ্গে শুধু আল্লাহর জন্য আমল করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, আর তাদের কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তারই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে (সুরা বাইয়্যেনাহ, আয়াত ৫)। দুই. ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রিয়নবী (সা.)-এর অনুকরণ ও অনুসরণ করা। আল কোরআন বলছে, ‘আর রসুল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন, তা তোমরা গ্রহণ করো, আর যা থেকে তিনি নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত হও’ (সুরা হাশর, আয়াত ৭)। আসুন, রমজানের আমলগুলো জেনে নিই। রমজান মাসের প্রধান ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ইখলাসপূর্ণ পুরো মাস রোজা রাখা। বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা ঈমান, সওয়াব, ইখলাসের সঙ্গে রাখবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনা ক্ষমা করে দেওয়া হবে’।

তারাবি ও তাহাজ্জুদ আদায় : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাব তথা ঈমান, সওয়াব ইখলাসের সঙ্গে রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তার পেছনের সব গুনা মাফ করে দেবেন’ (বুখারি ও মুসলিম)। আমরা ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায়ে মনোযোগী হব। প্রতিদিন অধিক সময় কোরআন তিলাওয়াত করব, অর্থ ও তাফসির বুঝব। হাদিসে বর্ণিত, হজরত জিবরাইল (আ.) রমজানের শেষ দিন পর্যন্ত প্রতি রাতে রসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন আর রসুল (সা.) তাকে কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করে শোনাতেন’ (বুখারি)।

দান, সদকা-খয়রাত ও রোজাদারকে ইফতার করানো : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের সদকা সবচেয়ে উত্তম সদকা’- (তিরমিজি)। তিনি (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতারি করাবে সেও রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। এতে রোজাদারের সওয়াব মোটেও কমানো হবে না’ (মিশকাত)।

নিজেকে হালাল উপার্জনে নিয়োজিত রাখা : ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হলো হালাল রুজি। আহার ও রুজি হারাম হলে আল্লাহর দরবারে ওই ব্যক্তির কোনো ইবাদতই কবুল হবে না। রমজানে এর গুরুত্ব বেড়ে যায় বহুগুণ। রসুল (সা.) রমজানে হালাল রুজির প্রতি যতœবান ব্যক্তির জন্য ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘যার রমজান মাস নিরাপদে কাটল, তার পুরো বছরই নিরাপদে কাটল’- (তিরমিজি)।

বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তেগফার করা : মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানে বান্দার দোয়া কবুল করা হয়- (হাদিসের অংশ)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও স্বীয় গুনা ক্ষমা করাতে পারল না তার ওপর লানত, ধ্বংস নেমে আসে’ (বুখারি)।

এতেকাফ : বুখারি বর্ণিত, হুজুর (সা.) প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছরও ২০ দিন এতেকাফ করেন। রসুল (সা.)-এর ওফাতের পর তার স্ত্রীরা নিয়মিত এতেকাফ করতেন।

শবেকদর তালাশ করা : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে শবেকদর তালাশ কর।’ অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমান, সওয়াব ও ইখলাসের সঙ্গে শবেকদরে ইবাদত করল তার পূর্ববর্তী সব গুনা ক্ষমা করে দেওয়া হয়’ (বুখারি ও মুসলিম)।

রমজানে ওমরা আদায় : রসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানে ওমরা আদায় হজের সমান সওয়াব’- (বুখারি)।

পাপ কাজ ছেড়ে দেওয়া : পাপের ফলে রমজান মাসের বরকত ও সওয়াব নষ্ট হয়। রমজানের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করার কারণে কখনো কখনো গুনার ভাগী হতে হয়। তাই রোজাদারের জন্য রমজান মাসে সগিরা, কবিরা ছোট-বড় সব গুনা বর্জন করা আবশ্যক। প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও পাপ কাজ ছাড়ল না, আল্লাহর জন্য তার ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই’ (বুখারি ও মুসলিম)।

এ ছাড়া রমজানের আরো অনেক আমল রয়েছে। তবে উল্লিখিত আমলগুলোই রমজানের বিশেষ আমল। এসব আমল ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে করতে পারলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হবে। আসুন, আমরা এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন

প্রিন্সিপাল, মনিপুর বাইতুর রওশন মাদরাসা

মিরপুর, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close