মোহাম্মদ খোরশেদ আলম

  ১৬ এপ্রিল, ২০২০

মুক্তমত

পুলিশ সার্ভিস শুধু পেশা নয়, মানবিক সেবা

সমগ্র বিশ্ব এক অচলায়তন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে, দুর্যোগে আমার সাধ্যমতো, সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে যাচ্ছি আপনাদের ভালো রাখতে। ইনভিজিবল টেরর অর্থাৎ এক অদৃশ্য শত্রু তাড়া করছে আমাদের। আমরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে আপনাদের জন্য বাইরে আছি। আপনারা প্লিজ ঘরে থাকুন। সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

বাড়িতে আমার মা আছেন। বাসায় আমার স্ত্রী আর আছে দুটি সন্তান। আমি জানি না আমি কি তাদের কাছে সুস্থভাবে ফিরতে পারব কিনা। আসলেই ফিরতে পারব কিনা এক অজানা আতঙ্ক! পুলিশের চাকরিতে যখন যোগদান করি তখন থেকেই মানবিক কাজের জন্য, যেকোনো দুর্যোগে দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে বদ্ধপরিকর হয়েই নিবেদিত। আমি জানি না, এই নিস্তব্ধতা, এই অশান্ত প্রকৃতি, এই স্থবিরতা কবে কাটবে? আমি বিশ্বাস করি মানবিকতায়। আমি অন্তরে লালন করি একটা মানবিক পৃথিবীর। যেখানে মানুষ মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে।

বেদে পল্লীর ওই পরিবারগুলো যখন না খেয়ে ছিল। যখন আমাকে ওদের সর্দার ফোন করেন। বিশ্বাস করুন; আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না। শুধু মনে হলো, আমার উচিত যেভাবেই হোক ওদের কাছে খাবার পাঠানো। যখন দেখলাম অসচেতন নাগরিক ভাইবোনেরা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাস্ক, গ্লাভসবিহীন পর্যাপ্ত করোনা প্রতিরোধ ছাড়া জনসমক্ষে। ওরাও জীবিকার টানে ছুটছিল, কী বলব ওদের?

নিজের সাধ্যমতো, সামর্থ্য অনুযায়ী পেশাগত দায়িত্বের বাইরে যতটুকু পেরেছি অংশীদার হয়েছি ওদের একজন হয়ে। আমার নিজ এলাকায়ও যতটুকু সম্ভব আমার মা-ভাই সহযোগিতা করে যাচ্ছেন সাধ্যমতো। আমি ভাবি, আমি আমার না। আমি চাই, আমি সব অবহেলিত পরিবারের সদস্য হতে। যতটুকু পারছি করে যাচ্ছি নিজের অবস্থান থেকে। কখন সকাল হচ্ছে, কখন রাত কেটে যাচ্ছে। কখন ঘুমাচ্ছি। কখন এই জায়গা থেকে ওই স্পটে। হাইওয়ে নিরাপত্তা, পাবলিকদের দোরগোড়ায়। এই ওয়ার্ড থেকে ওই ওয়ার্ড ছুটে বেড়াতে জীবনের রুটিন এলোমেলো হয়ে গেছে। ভিডিওকলে যে নিজের অবুঝ বাচ্চাদের একটু দেখব সেটাও করতে পারছি না। আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জ এলাকাকে ডেঞ্জার জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক পরিবার ঘরবন্দি। যখনই সংবাদ পাচ্ছি, যতটুকু পারি রেসপন্স করার চেষ্টা করছি। শুধু আমি না, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য এখন তাই করে যাচ্ছেন।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিবাদ এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই করেছিলেন। এই ক্রাইসিস মোমেন্টে সবচেয়ে বড় রিস্ক নিয়ে পুলিশ বাহিনীই মাঠে। শুধু আপনাদের ভালো রাখতে। আপনাদের জন্য। প্লিজ আপনারা ঘরে থাকুন। আপনাদের ভালো রাখতে নিজের পরিবার, নিজ স্ত্রী সন্তান থেকে দূরে থেকে রিস্ক নিয়ে মাঠে আছি। একদিন একটা সুন্দর সকাল আসুক। সেই সকালের জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করে, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনাদের নিরাপত্তা দিতে, ভালো রাখতে আপনাদের দ্বারপ্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ এলাকার একটা পরিবারও না খেয়ে থাকবে না ইনশাল্লাহ। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সর্বোচ্চভাবে সতর্ক ও সচেতন হয়ে দৃষ্টি রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের ভালো রাখা। আপনারা ঘরে থাকুন। ৯৯৯ এ ফোন দেন। আমাদের সরাসরি ফোনে যোগাযোগ করুন। সাধ্যমতো আপনাদের সেবায় নিয়োজিত। পুলিশ সার্ভিস শুধু একটা পেশা না। মানবিক পেশা। ডিফেন্স সিস্টেম অব এনি ক্রাইসিস মুভমেন্ট। এই অনুপ্রেরণা, কাজের প্রতি স্পৃহা, গতিশীলতা সবসময় পেয়ে যাচ্ছি আমার শ্রদ্ধেয় অভিভাবক বাংলাদেশ পুলিশের জীবন্ত কিংবদন্তি, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) মহোদয় এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, পিপিএম (বার) মহোদয়ের কাছ থেকে।

মানুষে মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক পৃথিবী। ভালোবাসা আর মানবিকতায় হার মানুক করোনাভাইরাস।

আপনাদের জন্য পরিবার, জীবনের মায়া ত্যাগ করে সবসময় সর্বোচ্চ সার্ভিসটা নিঃস্বার্থভাবে দিতে চাই, যার বিনিময়ে শুধু চাই ঘরে থাকুন। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না। এই ভাইরাস এতটাই সংক্রমিত করে যে, একজন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে জ্যামিতিক হারে কয়েকশ’ লোককে নিমিষেই আক্রান্ত করে। সুস্থ লোক ও মূহূর্তে আক্রান্ত হতে পারে।

আপনারাও আমাদের ফ্যামিলি। সেই হিসেবে আমাদের ফ্যামিলি ও আপনাদের ফ্যামিলি। ফ্যামিলির নিরাপত্তার জন্যই আপনাদের ঘরে থাকতে হবে এই ক্রাইসিসে। সবাই ভালো থাকুন; সুস্থ থাকুন, নিরাপদে ঘরে অবস্থান করুন।

লেখক : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close