reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮

ফিরে আসুক তাঁতের ঐতিহ্য

তাঁতশিল্প দেশের একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাত। বৈচিত্র্য আর স্বকীয় নান্দনিকতার জন্য আবহমানকাল থেকেই সবার কাছে তাঁতবস্ত্রের ছিল ব্যাপক সমাদর। একসময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ শিল্পের ক্রমাগত বিস্তার দেখা গেলেও নানা কারণে পাবনা অঞ্চলে তার প্রসার ঘটে সবচেয়ে বেশি, যা এ জেলার ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের তাঁতিরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে দেশে কাপড়ের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রফতানিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে মন্দার কবলে পড়েছে এখানকার তাঁতশিল্প। দেশ-বিদেশে তাঁতবস্ত্রের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় এ অঞ্চলের তাঁতমালিকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতে অব্যাহত লোকসানের কারণে মালিকরা কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া হাজার হাজার তাঁতশ্রমিক বেকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

অন্য শিল্পের সঙ্গে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় চরম মন্দার কবলে পড়েছে। এ ছাড়া মুক্ত বাজার অর্থনীতির আড়ালে পরোক্ষ আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে তাঁতশিল্প। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘স্মরণকালের মন্দার কবলে দেশের তাঁতশিল্প’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশে রফতানি এবং দেশে চাহিদা কমে যাওয়ায় তাঁতবস্ত্রের বাজারদর প্রতিদিন নি¤œমুখী হচ্ছে। সরকারিভাবে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এ অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। দেশ-বিদেশে তঁাঁতবস্ত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় তাঁতে উৎপাদিত পণ্য লোকসানে বিক্রি করে তাঁতিরা পুঁজি হারাচ্ছেন। বিশেষ করে প্রান্তিক তাঁতিরা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই তাঁতযন্ত্র বিক্রি করে কেউ পোশাকশিল্পে, কেউবা মাটিকাটা শ্রমিক হিসেবে আবার কেউ রিকশাচালকের কাজ নিয়েছেন। কেউ কেউ পুঁজি হারিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে পাবনা অঞ্চলের অর্ধেক তাঁতযন্ত্র বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ঋণগ্রহীতারা তাদের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। তাঁত বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই তাঁতযন্ত্রের কাঠ জ্বালানি হিসেবে এবং লোহা ভাঙাড়ির দোকানে বিক্রি করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁতশিল্পের এ দুরবস্থার মূলে রয়েছে ভারত থেকে নামমাত্র মূল্যে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে নানা ধরনের রং ও ডিজাইনের কাপড়ের অবাধ প্রবেশ। মূল্য কম হওয়ায় জনগণও এসব পণ্যের দিকে ঝুঁকছে বেশি। ফলে ধীরে ধীরে উৎপাদিত এসব তাঁতপণ্যের চাহিদা বাজারে কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে দেশে তৈরি পোশাকশিল্প ও তাঁতিদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মনে রাখতে হবে, দেশে শিল্পায়নের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এর ওপর যদি স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সিঃসন্দেহে তা হবে আত্মঘাতের শামিল। তাই জাতীয় স্বার্থে এই শিল্পকে রক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি তাঁতমালিকদের সহজশর্তে অর্থায়নের সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে তবেই এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে পারবে। ফিরে পাবে তার হৃত গৌরব। হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম রফতানি দ্রব্য এবং বাংলার অহঙ্কার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close