রাশেদুল ইসলাম, জাবি
নবীন গবেষক তৈরিতে কাজ করছে জাবির রিসার্চ সোসাইটি
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো গবেষণা। চিন্তাশীল ও উদ্ভাবনে দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি এবং উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার বিকল্প নেই। উন্নত দেশে গবেষণায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হলেও আমাদের দেশে তা একেবারেই সামান্য। বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই গবেষণাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে দেশে উচ্চশিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণামুখী শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি না হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরাও গবেষণা করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পায় না। ফলে দিন দিন গবেষণাবিমুখ গ্র্যাজুয়েট তৈরি হচ্ছে।
দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চতর গবেষণার জন্য ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছর পার হলেও ছিল না শিক্ষার্থীদের গবেষণাচর্চার কোনো সংগঠন। গবেষণার প্রতি আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সঠিক দিকনির্দেশনা ও প্ল্যাটফরমের অভাবে শিক্ষার্থীরা গবেষণা চর্চার সুযোগ পেত না। তাই শিক্ষার্থীদের গবেষণার প্রতি আকৃষ্ট করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের ৩১ জুলাই ‘রিসার্চ ইন দ্য কোয়েস্ট অব নলেজ’ স্লোগানকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সোসাইটি। শুরুতে মাত্র ১৭ জন সদস্য নিয়ে শুরু হলেও সংগঠনটিতে বর্তমানে ৩৩ জন কার্যনির্বাহী সদস্য এবং ১৮৭ জন সাধারণ সদস্য রয়েছে। গবেষণার পাশাপাশি নেতৃত্ব চর্চার উদ্দেশ্যে সদস্যরা ১০টি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠার মাত্র এক বছরেই জেইউআরএস বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প সম্পন্ন করেছে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনতম শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। ভবিষ্যতে সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের নিয়ে দক্ষ গবেষক ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সমন্বয়ে বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প শুরুর পরিকল্পনা করছে। শিক্ষার্থীদের গবেষণা বিষয়ে ধারণা দিতে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করছে সংগঠনটি। এর মধ্যে রয়েছে, রিসার্চ মেথডলজি, রিসার্চ লিডারশিপ, ব্যাসিক কম্পিউটার স্কিল, উচ্চশিক্ষায় নিয়ে সেমিনার, ব্যসিক এসপিএসএস, রিসার্চ আইডিয়া কনটেস্ট ইত্যাদি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের গবেষণা বিষয়ে ভীতি দূর করতে এবং স্নাতক শেষ করার আগে নিজস্ব রিসার্চ পেপার প্রকাশ করতে রিসার্চ সামিট, রিসার্চ কনফারেন্স, রিসার্চ ট্রেইনিং এবং ইন্টার্নশিপের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। শিক্ষার্থীদের গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক রিসার্চ সামিট, কনফারেন্স এবং জার্নালগুলোয় প্রকাশ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা জানায় সংগঠনটি।
সংগঠনটির সভাপতি আল আমীন বিজয় বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণার প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। ১ম বর্ষ থেকেই যেন একজন শিক্ষার্থী গবেষণার বিষয়ে জানতে পারে এবং যারা গবেষণা বিষয়ে আগ্রহী তারা যেন সঠিক দিকনির্দেশনা পায় সে উদ্দেশ্যেই কাজ করছে রিসার্চ সোসাইটি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী সামিহা সালমা বলেন, প্রথম বর্ষ থেকেই আমি রিসার্চ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছি। আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায় সাম্প্রতিক ঘটনা দেখে কী হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে, এটার ফলাফল কী, মনে নানা ধরনের প্রশ্ন জাগত। এই প্রশ্ন জাগা থেকেই গবেষণার প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠে। রিসার্চ সোসাইটির বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার, রিসার্চ আড্ডা থেকে গবেষণার খুটিনাটি বিষয় জানার পাশাপাশি আমার নেতৃত্ব চর্চার একটি বিশাল সুযোগ এখানে হয়। আমি আশা করছি, এখান থেকে গবেষণা বিষয়ে জ্ঞান নিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণে এবং দেশের জন্য কিছু করতে পারব।
"