নিয়ামুর রশিদ শিহাব, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
কল্পনায় অনুভব করি মায়ের ভালোবাসা
অনেক দিন হলো মায়ের কাছ থেকে দূরে। তোমার স্পর্শ পাই না। বাড়ি ছেড়েছি এসএসসি পরীক্ষার পরেই সেই ২০১৯ সালে। এরপর করোনার কিছু মাস বাদে একটানা বাড়ি থাকা হয়নি। চার বছর বরিশাল ছিলাম। ইচ্ছে করলেই বাড়ি যাইতাম। মন চাইলেই চলে যাইতাম মাত্র ৭০ কিমি. দূরে। অনেক সময় না বলেও চলে যেতাম বাড়িতে। কলেজ বন্ধ নাকি খোলা তোয়াক্কা করতাম না। কলেজ লাইফ শেষ করে আজ ঢাকার এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমি। আমি আজ অনেক দূরে। সংগত কারণে দিনের পর দিন বাইরে থাকতে হয়। ইচ্ছা হলেও বাড়ি ফিরতে পারি না। বেশ কিছুদিন ধরে মনটা অস্থির হয়ে আছে। কিছু ভালো লাগছে না। কথা জমে বুক ভারী হয়ে গেছে। মন চায় মাকে জড়িয়ে মনের সব কথা বলি। মাকে জড়িয়ে ধরলে মনে হয় পৃথিবীর সব সুখ ও শান্তি বুঝি মায়ের বুকেই। বুকের ভার অনেক হালকা হয়ে যায়।
আজ আমি বয়সে বড় হয়েছি। ঢাকা শহরে অনেক কিছু আজ চেনা, নিজে একা চলতে পারি। ইচ্ছে করলেও শহরের যেকোনো জায়গায় যেতে পারে, কিন্তু চাইলেও সময় করে বাড়ি যাওয়া হয় না।
জীবনে এতটা বড় হতে চাই না, যে সব সময় ব্যস্ততা লেগে থাকবে, প্রতিদিন ফোনে ২/১ মিনিট বেশি কথা হবে না, ফোনের ওই পাড়ে মুখগুলো ভেসে উঠলেও মাসের পর মাস প্রিয় মানুষগুলোর মুখ দেখা হয় না। এতটা ব্যস্ত জীবন আমি কখনোই চাই না।
কিন্তু দুঃখ একটা, এই যে দূরে আছি, ভালো ইউনিভার্সিটি পড়ালেখা করি, এর ফলস্বরূপ তো আজীবনই এমনই কাটাতে হবে। ভালো ইউনিভার্সিটি পড়ালেখা করে, ভালো চাকরি করতে হবে, শহরে শহরে থাকতে হবে। এটা যেন সমাজের একটা নিয়ম। নতুবা মানুষই বলবে, ছেলেকে এত টাকা খরচ করে, ভালো জায়গায় লেখাপড়া করাইছে, কোথায় এখন চাকরি করে?
অনেকে ভালো বা খারাপ যেকোনো চাকরি পেয়েও আত্মসম্মান রাখতে নিজের সমাজ থেকে দূরে থাকে। চাকরি করতে গিয়ে এত ব্যস্ততায় নিজের বাবা মায়ের সঙ্গে মাসের পর মাস দেখা করতে যাইতে পারে না। চাকরি মানে অন্যের কামলা খাটা, চাইলেই ইচ্ছে মতো কোনো কিছু করা যায় না। ছুটি পাওয়া যায় না। কিন্তু মন তো পড়ে থাকে সেই বাড়িতে। তখন আবার সমাজের ওই মানুষটাই বলে, সন্তান এত বড় চাকরি পেয়ে বাবা মা কে ভুলে যায়।
তবে শুকরিয়া আদায় করি সৃষ্টিকর্তার কাছে, এমন পূর্ণবান একজন মায়ের কোলে আমাকে পাঠিয়েছেন বলে। পৃথিবীর একমাত্র কোমল ও আদর মাখানো মায়ের স্পর্শ। একমাত্র মায়ের বুকই সন্তানের জন্য নিরাপদ স্থান। সারাজীবন মায়ের পাশেই থাকতে চাই। পৃথিবীর সব মা ভালো থাকুক।
"