reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যের ওপর শিক্ষকদের প্রত্যাশা

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে আলোর মুখ দেখল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেন ড. হোসেন উদ্দিন শেখর। একজন উপাচার্যের দক্ষ নেতৃত্বে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমূল পরিবর্তন হওয়া সম্ভব। উপাচার্য মহোদয় হয়ে উঠুক পরিবর্তনের ধারক ও বাহক। উপাচার্য মহোদয়ের উপর সবার অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় কয়েকজন শিক্ষকের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরছেন উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও লেখক জুবায়েদ মোস্তফা

দক্ষতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে হবে

নতুন সূর্য শিখার আলোয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান বিতরণ হবে নির্বিঘ্নে ও বাধাহীন চিত্তে এমন প্রত্যাশা শিক্ষার্থীসহ সবার। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখাটা সবার আগে স্থান পাবে নতুন ভিসি ও প্রো-ভিসির নিকট। কারণ দীর্ঘদিন যাবত পাঠদান ও শিক্ষাগ্রহণের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেটা যেমন হতে হবে শ্রেণিকক্ষ, সেমিনার তেমনি হতে হবে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরের সর্বক্ষেত্রে সব জায়গাতে। জ্ঞান অর্জনের এমন পরিবেশ রূপায়ন করতে হবে- যেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা থাকবে ক্যাম্পাস ও শিক্ষামুখী। ক্যাম্পাসের আঙ্গিনা, শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, সংস্কৃতি ও ভাষার চর্চা, দক্ষতা অর্জন, কম্পিউটার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও ল্যাবরেটরি হবে শিক্ষা অর্জনের আঁতুরঘর। বিষয়গুলো যেন কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে অধিক যত্নবান হতে হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যকার সম্পর্ক গড়তে হবে চমৎকার মানুষ গড়ার আদর্শের, যেখানে ভয় ও প্রভুত্ত্ববাদ স্থান পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রাখা যেতে পারে, যেখানে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের অর্থ ব্যয় করতে হবে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রগুলোতে। মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো শিক্ষার্থীরা আর তাদের প্রাণ শক্তি হলো শিক্ষকরা। সেজন্য শিক্ষককে হতে হবে দক্ষ, মেধাবী ও আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন গবেষণামূখী এবং শিক্ষার্থীবান্ধব। আবাসিক হলগুলোর সংস্কার ও নতুন হল নির্মাণ এখন যুগের প্রয়োজন। মৌলিক মানবাধিকারের সার্বজনীন প্রয়োজনগুলো যেন পূর্ণতা পায়, যেমন- পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও পানির ব্যবস্থা, চিকিৎসাসেবা উন্নত করা ও ২৪ ঘণ্টার জন্য জরুরি ডাক্তারি সেবা নিশ্চিত করা, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ, খেলার মাঠ, সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা, চলাচলের রাস্তা নির্বিঘ্নœ করা, পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা থাকা, মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা রাখা, জনজীবনসহ সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষা সমাপনী সনদ উত্তোলনে সহজিকরণ করা, র‌্যাগ ও ইভটিজিংমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, সর্বপরি শিক্ষার্থীদের জন্য ভয়হীন পরিবেশ তৈরি করা। গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করাটা প্রাসঙ্গিক।

মো. মজনুর রশিদ

সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ ও সম্পাদক, গোপালগঞ্জ জেলা রোভার।

শিক্ষার্থীবান্ধব নীতি গ্রহণের পাশাপাশি ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি তৈরি হোক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্য মহোদয়ের নিকট আমাদের প্রত্যাশা নিম্নরূপ:

১। একাডেমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ প্রদান। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মারাত্মক শিক্ষক সংকট রয়েছে। অতিদ্রুত শিক্ষক সংকট নিরসন করা, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম দূর করা। গবেষণার জন্য বিশ্বমানের গবেষকদের আমন্ত্রণ জানানো এবং আলাদাভাবে রিচার্স ফ্যাকাল্টি নিয়োগ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

২। বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার্থীবান্ধব নীতি গ্রহণ করা, হলের পরিবেশ উন্নত করা, লাইব্রেরি আধুনিকায়ন করা, একাডেমিক ভবনের ক্লাসরুমগুলো উন্নত করা। গবেষণার মান উন্নয়ন করা, শিক্ষার্থীদের গবেষণার ফান্ড চালু করা। এছাড়াও এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যকলাপকে উৎসাহিত করা যেমন ডিবেটিং ক্লাব, আবৃত্তি সংগঠন, থিয়েটার, সাহিত্য সংসদ, তরুণ কলাম লেখক ফোরাম সহ নানান সাংস্কৃতিক সংগঠনকে উৎসাহিত করা।

৩। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ন্যায়বিচারের সুযোগ সৃষ্টি করা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। আর্থিক কেলেংকারি, যৌন কেলেংকারিসহ নানান অপরাধ করে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে। এখানে তদন্ত একধরনের প্রহসনে পরিণত হয়েছে। জাস্টিস ডিলেইট, জাস্টিস ডিনাইড শব্দটি এখানে পুরোপুরি প্রযোজ্য। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হলেও নির্ভয়ে তারা যে অভিযোগ করতে পারবে তার কোনো ব্যবস্থা নেই। যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরিতে যৌন নিপীড়ন সেলের সদস্য কারা তাও উল্লেখ নেই এবং কোথায়, কীভাবে অভিযোগ করা যায় তার কোনো তথ্য শিক্ষার্থীদের নিকট নেই। নেই কোনো কাউন্সিলিং সেন্টার।

তাই নতুন প্রশাসনের কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে বিদ্যমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং যৌনহয়রানি প্রতিরোধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যাতে ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করতে পারে, প্রতিরোধ করতে পারে।

ড. মো. আবু সালেহ

সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক জ্ঞান উৎপাদন ও চর্চার অভয়ারণ্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ জ্ঞান উৎপাদন, জ্ঞানের চর্চা এবং উৎপাদিত জ্ঞান বিতরণ। জ্ঞান উৎপাদন, জ্ঞানের চর্চা এবং জ্ঞান বিতরণের জন্য দরকার উপযোগী পরিবেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ১৩ বছরে উপযোগী পরিবেশটাই তেমন করে গড়ে উঠেনি। ১৩ বছরের এ তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২টি বিভাগ এবং ১টি ইন্সটিটিউট। কিন্তু এ ৩২টি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় মাত্র একটি একাডেমিক ভবনে। পাঠদানের জন্য প্রধান উপকরণ হলো ক্লাস রুম। কিন্তু এখানে পাঠদানের কক্ষ এতই অপ্রতুল যে, শিক্ষকরা শিফট করে সকাল-বিকাল পাঠদান করে আসছে। এতে করে শিক্ষকদের কার্যকর সময়ের যাচ্ছেতাই ব্যবহার হচ্ছে, সঙ্গে অযত্নে বেড়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা।

বৈশ্বিক রীতি অনুযায়ী একজন শিক্ষকের টিচিং লোড থাকার কথা ৪০ শতাংশ এবং গবেষণা লোড ৬০ শতাংশ। কিন্তু এ ৮ হাজারজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র ৩শ’ জন, এদের মধ্যে শতাধিক শিক্ষক উচ্চ-শিক্ষার্থে দেশ এবং দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাই এত বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীদের এত অল্প সংখ্যক শিক্ষকের মাধ্যমে আবশ্যক পাঠদান কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই শিক্ষকরা নতুন জ্ঞান উৎপাদনে মনোনিবেশ না করে অযত্নে অবহেলায় অপ্রতুল জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু অনেক সম্ভাবনার বিশ্ববিদ্যালয় এ বশেমুরবিপ্রবি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবথেকে সম্ভাবনার জায়গা এর তারুণ্য, বিদ্যমান তিনশ’ শিক্ষকের প্রায় সবার বয়স চল্লিশের নিচে যার মধ্যে ষাটের অধিক শিক্ষক এরই মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করে জ্ঞান উৎপাদন ও বিতরণে অংশগ্রহণ করেছে এবং আগামী ১-২ বছরের মধ্যে শিক্ষাছুটিতে থাকা শতাধিক শিক্ষক উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করবেন।

পরিশেষে বলতে চাই, নতুন একাডেমিক ভবন, অডিটোরিয়াম, গবেষণাগার, রিসার্চ ফ্যাসিলিটি, শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্পন্ন আবাসন, নতুন যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য নান্দনিক ক্লাস ও অফিস রুমের ব্যবস্থা করতে পারলেই এ তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় একদিন নতুন জ্ঞান উৎপাদন ও চর্চার অভয়ারণ্যে পরিণত হবে বলে বিশ্বাস করি।

ড. আরিফুজ্জামান রাজীব

সহযোগী অধ্যাপক, ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close