reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস: প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি

১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম স্কুলের পরিবর্তিত রূপই আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাসের মাধ্যমে এটি পরিপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। ২০১৬ সালে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর অনেকগুলো বছর পার হলেও কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। দ্রুত দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর নিকট কাজ হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির গল্পগুলো তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইয়াছিন ইসলাম

২য় ক্যাম্পাস জবি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নসিঁড়ি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের স্বপ্ন যেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনের গভীরে গেঁথে আছে। প্রতিদিনের সীমাবদ্ধতা, আবাসনের অভাব, সুষ্ঠু গবেষণা ও পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের সংকটে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলা শিক্ষার্থীদের জন্য কেরানীগঞ্জের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস যেন এক আশার আলো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নানা বাধার কারণে প্রকল্পটির অগ্রগতি থমকে গেছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, এই ক্যাম্পাস শিক্ষাজীবনের প্রতিটি কষ্ট মুছে দিয়ে গবেষণায় উৎসাহিত করবে এবং তাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপান্তর করবে, যেন নবীনরা অন্তত একটি উন্নত শিক্ষার পরিবেশে নিজেদের বিকাশ ঘটাতে পারে। তাই আজ শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে এই দাবি তুলছে, স্বপ্ন পূরণে সময়ের দরকার আর সেই দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে হোক।

মারিয়া হাবিব

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ শিক্ষার পরিবেশ

আমাদের আশা, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসটি শুধু শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করবে না, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষার পরিবেশও গড়ে তুলবে। নতুন ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত লাইব্রেরি, গবেষণাগার, এবং খোলা জায়গার ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীরা তাদের সৃজনশীলতা ও মেধাকে সঠিকভাবে বিকশিত করতে পারবে। বর্তমান ক্যাম্পাসের অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধার কারণে অনেক শিক্ষার্থী মেসের সংকীর্ণ পরিবেশে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে, যা তাদের মানসিক এবং শারীরিক উন্নতির জন্য বাধা সৃষ্টি করছে। নতুন ক্যাম্পাসের জন্য ২০০ একর জমিতে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও নানা জটিলতার কারণে সেটি এখনো স্বপ্নেই সীমাবদ্ধ। শিক্ষার্থীরা এই প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চায়। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি আদর্শ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাবে।

প্রিয়া আফরোজ

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রত্যাশা বনাম বাস্তবতা

ক্যাম্পাস হলো এমন একটি জায়গায় যেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা, গবেষণা, সামাজিক কার্যকলাপ এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাবে। কিন্তু বাস্তবতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেন একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো মানসম্মত গবেষণাগার। তবে এতকিছুর মধ্যও আমাদের আছে শ্রেণিকক্ষের সংকট, শিক্ষকদের কক্ষের সংকট সঙ্গে লাইব্রেরি সংকট। তবে সংকট নিরসনে জবির নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ২০০ একর জমির ওপর ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকার এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালে অক্টোবরের মধ্য। যেটির এখন পর্যন্ত কোনো রূপরেখা তৈরি করতে পারেনি দুর্বল প্রশাসন ব্যবস্থার কারণে। দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর, শিক্ষার্থীদের মধ্য অধিকার বোধ জেগেছে, অধিকার আদায়ের প্রতি অটল থেকে ৩ দফা দাবি করেছে ইতোমধ্যেই। যার মধ্য অন্যতম দাবি ছিল ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা। এই আদর্শ ক্যাম্পাস নির্মাণে সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই। আমরা যে অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে ক্যাম্পাস জীবন পার করছি সেটা যেন আগামীতে আগত নবীন শিক্ষার্থীরা না করে এমনটাই প্রত্যাশা।

আব্দুল আলিম

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বপ্ন হোক সত্যি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটা অন্যরকম আবেগের জায়গা। ভর্তির পূর্বে একরাশ স্বপ্ন আর বুকভরা আশা নিয়ে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আগমন ঘটে নবীন দের। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে অনেক মধুর এবং সুন্দর কিছু কল্পনা-পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেসব ম্লান হয়ে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়টি এবছর ১৯ এ পা দিলো। কিন্তু এখনো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আবাসিক সুবিধা নাই। না আছে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম আর উন্মুক্ত চত্বর। নেই গবেষণা বা লাইব্রেরি সুবিধা। এতসব সীমাবদ্ধতার পরও জবিয়ানরা একটা স্বপ্ন আঁকড়ে বেঁচে আছে, তা হলো দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। কেরানীগঞ্জে প্রস্তাবিত ২০০ একরের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পটির চারবার মেয়াদ বাড়ার পরও নানা দুর্নীতির কারণে অগ্রগতির পরিমাণ খুবই নগণ্য। আর সবার মতো আমিও সবসময় আশায় বুক বাঁধি আমাদের ২০০ একরের নতুন ক্যাম্পাস তৈরি হবে। আমরা না পাই, কিন্তু আমাদের অনুজরা বিচরণ করবে সেই সবুজ চত্বরে। তখন আর কোনো দরিদ্র শিক্ষার্থীকে থাকা-খাওয়ার জন্য কঠোর জীবনসংগ্রামে নামতে হবে না। সুন্দর একটা পঠনপাঠন পরিবেশ তৈরি হবে, বাংলাদেশের অন্যতম আইকনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে। আশা হতাশার এই ধোঁয়াশা দূর হোক, সব দুর্নীতির মূল খুঁজে বের করা হোক, সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক, আর সবার দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে নতুন তথা দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর করা হোক।

নাজিব মাহমুদ অনিক

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

দ্বিতীয় ক্যাম্পাস জবিয়ানদের একরাশ স্বস্তি

ব্রজোসুন্দর বসু ব্রহ্ম স্কুল থেকে জগন্নাথ কলেজ যা ২০০৫ সালের ৫ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে। অল্প সময়ের মধ্যেই জগন্নাথ এগিয়েছে অনেকটাই কিন্তু আফসোসের বিষয় রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নেই। ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটা হল নির্মাণ করা হয় যেখানে সিট সংখ্যা মাত্র ১২০০। হল না থাকার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় পুরান ঢাকার অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আসে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে যাদের অনেককেই নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ চালাতে নিজেকেই। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে গবেষণার সুযোগ, ক্লাসরুমের সংকট, লাইব্রেরিতে নেই যথেষ্ট পরিমাণে বই এমনকি বসার জায়গাও এবং পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শুধুমাত্র একটি ক্যাফেটেরিয়া। সবমিলিয়ে বর্তমানের ১০ একরের এই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ‘survival of the fittest’ এর মতোই সারভাইভ করে বেঁচে আছে। তাই দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই আশা আকাশচুম্বী। প্রতিটি শিক্ষার্থীই বর্তমানে এই আশা নিয়ে নিজেদের জীবনের এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে যে তাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তাদের এইসব ভোগান্তিগুলোকে নিমিষেই একরাশ স্বস্তিতে রূপান্তর করবে। তাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় ক্যাম্পাস জবিয়ানদের কাছে একরাশ স্বস্তির নাম।

নাজিফা নিমু

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close