মোস্তফা কামাল, চবি

  ২৪ মার্চ, ২০২৪

মন জমিনে শিল্পের বীজ বুনেন জিয়াউদ্দিন সায়েম

জিয়াউদ্দিন সায়েম পড়াশোনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে। ছোটবেলা থেকেই ক্যালিগ্রাফির প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক । বর্তমানে ক্যাম্পাসে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে। তার ক্যালিগ্রাফির গল্প শোনাচ্ছেন মোস্তফা কামাল-

আমার ছোটবেলা থেকেই ক্যালিগ্রাফি ভালো লাগত। ক্যালেন্ডারের মধ্যে দেখতাম। সেগুলো নিজে নিজে চেষ্টা করতাম। মাদরাসার দেয়ালিকায় জমা দিতাম এঁকে। সায়েম যখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তখন দেশে ছিল ভয়াবহ করোনা। সায়েম বলেন, করোনার সময় অলস সময় পার করছিলাম। তখন অনলাইনে সিলেটের প্রসিদ্ধ ক্যালিগ্রাফার কাজী সাইদ তানভীর ভাইয়ের একটা কোর্স করেছিলাম। সেখান থেকেই নতুন করে ভালোভাবে ক্যালিগ্রাফিচর্চার শুরু। করোনার পর ঢাকায় গিয়ে বাংলাদেশে আধুনিক ক্যালিগ্রাফির পথিকৃৎ মাহবুব মুর্শিদ স্যারের একটা অফলাইন কর্মশালায় অংশগ্রহন করি। তারপর থেকে নিজে নিজে অনুশীলন আর চর্চা করি। কোথাও সমস্যা হলে সিনিয়র ক্যালিগ্রাফারদের থেকে পরামর্শ নেই। শখের বশে ক্যালিগ্রাফি করেন সায়েম। প্রথমে ক্যালিগ্রামি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করতেন। বন্ধুবান্ধব সহপাঠীদের থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রতিনিয়ত। ধীরে ধীরে সায়েমের শিল্পকর্মের কথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বন্ধুবান্ধব, সহপাঠীরা বায়না ধরে ক্যালিগ্রাফি করে দিতেই হবে। সায়েম নিরাশ করে না কাউকে। বন্ধুবান্ধব ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার আসে তার কাছে। আয়াতুল কুরসি, নামের ক্যালিগ্রাফি এমনকি নবদম্পতির নাম ক্যালিগ্রাফি করে দেওয়ার অর্ডার আসে তার কাছে। জন্মদিনে গিফট দেওয়ার জন্য আবার কেউ স্রেফ পড়ার টেবিলে কিংবা বাসার দেয়ালে সাজিয়ে রাখতে ক্যালিগ্রাফি নিচ্ছেন।

সায়েম ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। সায়েমের রুমমেট রাসেদ জামসেদ বলেন, ওর কাজগুলো অসাধারণ। সায়েম যখন কাজ করে তখন আমি এসে দেখি। ইচ্ছে করে আমিও ওর মতো আঁকি। সায়েমের রুমমেট হয়ে আমার সুবিধা হয়েছে। সব কাজ সামনাসামনি দেখি। খুব যত্নসহকারে কাজগুলো করে সায়েম।

আমার বন্ধুবান্ধব খুবই উৎসাহ দিচ্ছে আমার ক্যালিগ্রাফি চর্চায়। অনেকেই আছে এমন যারা অর্ডার এনে দিয়েছে, আবার নিজেদের জন্যও নিয়েছে। প্রায়ই তারা আমাকে ক্যালিগ্রাফি শিল্প পুরোপুরি প্রফেশনালি নেওয়ার জন্য তাকিদ দেয়।

কেউ কেউ তো এমনও বলে, তুই চাকরিতে না গিয়ে ক্যালিগ্রাফি করতে থাক। এটা নিয়েই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজা। আমিও সময় পেলেই কালি, কলম রংতুলি নিয়ে বসে পড়ি।

ক্যালিগ্রাফি করতে আমার বেশ ভালো লাগে। স্পেশালি কোরআনের আয়াত যখন লেখি, তখন স্বর্গীয় আবেগ অনুভব করি। আর মানুষজনের ঘরে আমার হাতে লেখা কোরআনের আয়াতসংবলিত ক্যালিগ্রাফি থাকবে, এটা ভাবলেই আনন্দে মন দুলে ওঠে। এমন অনেকবার হয়েছে, আয়াত লিখে নেওয়ার কারণে আমি পারিশ্রমিক অনেক কমিয়ে রেখেছি। সায়েমের সহপাঠী সাকিব মাহমুদ রুমী বলেন, ক্যাম্পাসে সায়েমের একটা বড় পরিচয় ক্যালিগ্রাফি শিল্পী। আরবি অক্ষর ও শব্দগুলোকে এত সুন্দর করে তুলে ধরে যে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী কেফায়েত উল্লাহ বলেন, সামেয়ের কাজে বেশ পেশাদারিত্বে ছোঁয়া আছে। প্রথম দিকে বিশ্বাসই হতো না এগুলো হাতে করা। ভবিষ্যতে ক্যালিগ্রাফি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? জবাবে সায়েম বললেন, প্রথমত ক্যাম্পাসে যারা ক্যালিগ্রাফি শিখতে আগ্রহী তাদের শেখাতে চাই। পড়াশোনা বা অন্য যেকোনো পেশার পাশাপাশি ক্যালিগ্রাফি চর্চা অব্যাহত রাখব। একজন ভালো ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট হিসেবেই নিজেকে দেখতে চাই, প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। নিত্যনতুন জিনিস শিখতে চাই। আবার কেউ শিখতে আগ্রহ দেখালে তাকেও নিরাশ করতে চাই না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close