নীল আকাশ আর সমুদ্রের নীলজলরাশি চুপি চুপি ডাক দিয়ে যায় যান্ত্রিক ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে প্রশান্তির দরজায়। মধ্যরাতের শীতল স্নিগ্ধ হাওয়া আর নীলজলের কমল শব্দে মনকে সতেজ করার প্রাকৃতিক চিকিৎসালয় হচ্ছে দক্ষিণের স্বর্গ সেন্টমার্টিন। সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, ক্লাস টেস্ট, মিড সেমিস্টার এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও গবেষণাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন একাডেমিক কার্য সম্পাদন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে মন উঁকি দেয় কোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকে। সেই খোঁজে সাময়িক স্বস্তির নেশায় ভিন্ন ধারায় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাড়ি জমায় দক্ষিণের স্বর্গ সেন্টমার্টিনে।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি অগভীর দীর্ঘ সমুদ্রতট, সামুদ্রিক প্রবাল, সমুদ্রের ঢেউয়ের ছন্দ, দখিনা হাওয়া, সারি সারি নারিকেল গাছ দেখে মনে হবে আপনাকে সবুজ-গালিচার সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য নারিকেল গাছগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো তাই এর আরেক জনপ্রিয় নাম নারিকেল জিনজিরা। সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর, দক্ষিণ, মধ্য পাড়া ও গলাচিপা অঞ্চল ঘুরে দুপুরে সমুদ্রে স্নান শেষে বিকেলে সাইকেলিংয়ে মেতে উঠেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর, দক্ষিণ, মধ্য পাড়া ও গলাচিপা অঞ্চলগুলোতে ঘুরেছি এবং স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, পর্যটন অঞ্চল হলেও এখানে তেমন উন্নয়ন হয়নি। স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকা উন্নয়নে পদক্ষেপ অনেক কম। এদিকে দ্বীপটিতে প্রতিদিন অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের যাতায়াত, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, পরিবেশ দূষণ, পর্যটকদের অসচেতনতা, স্থানীয় প্রশাসন এবং পর্যটকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় সেন্টমার্টিন দ্বীপে দেশিও পর্যটকসহ বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যটকদের জন্য যেমন নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি, তেমনি পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ি ফলদসহ মানসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা করার লক্ষ্যে স্থানীয় জমিতে পারিবারিক ছাড়াও বাণিজ্যিক ভাবে স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ ফল ও সবজির উৎপাদনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা চাই পর্যটন শিল্পের যেমন উন্নয়ন হচ্ছে তার চেয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর জীবন-মান উন্নয়ন, দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের যুগোপযোগী প্রকল্প প্রনয়ণ, যা অত্যন্ত জরুরি।

"