জবি প্রতিনিধি

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আসতে চায় জবি শিক্ষার্থীরা

প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৬ বছর হতে চললেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো স্বাস্থ্যবিমা চালু হয়নি। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বিমার দাবি উঠলেও টনক নড়েনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। করোনায় অনেক শিক্ষার্থী আক্রান্ত এবং সম্প্রতি কিছু শিক্ষার্থী চিকিৎসাকালীন মৃত্যু হলে আবারও প্রশ্ন উঠে স্বাস্থ্য বিমা কবে হবে?

৯ সেপ্টেম্বর বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন লেবু ১০৪ ডিগ্রি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা শুরু করাতে পারেননি লেবু। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, লেবুর দুই ভাই ভ্যান চালান। লেবু অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে টাকা চাইলে তার বাবা পরের দিন ঘুটা (গোবর শুকিয়ে তৈরি জ্বালানি) বিক্রি করে টাকা পাঠাবে এবং তারপর ডাক্তার দেখাবে। কিন্তু সেই সময় আর পাননি লেবু।

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী রাহাত আরা রিমি মারা গেছেন ১১ জুলাই। তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। তার সহপাঠী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রিমি প্রায় এক বছর আগে থেকেই শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এবং মৃত্যুর কিছুদিন আগে থেকে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় কিছুই খেতে পারছিলেন না। ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (১৩ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ইমরান পাভেল নামে এক শিক্ষার্থীর টাইফয়েড জ্বরে মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। তার বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, টানা সাত দিন ধরে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল তার। টিউশনি করার জন্য করোনাকালীন ঢাকায় চলে আসে। আর এখান থেকেই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। শিক্ষার্থীদের মতে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় এবং বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের হওয়ায় যেখানে আবাসন খরচ মেটানো কষ্টকর সেখানে স্বাস্থ্যসেবা অনিশ্চিত। কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে চিন্তায় পড়ে তাদের অভিভাবকরা। কিন্তু স্বাস্থ্য বিমা থাকলে সহজেই তারা তাদের চিকিৎসা করাতে পারবেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে ৮৫ টাকা বার্ষিক প্রিমিয়ামে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বিমার ঘোষণা দেন। এ সুযোগটি এখনো নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিপা বলেন, আমার বিভাগের আল আমিন ভাই জ্বরে মারা গেলো, টাকার অভাবে চিকিৎসা শুরু করতে পারেননি। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি কোনো আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা থাকত বা স্বাস্থ্য বিমা চালু থাকত তাহলে আল আমিন ভাইয়ের মতো সব মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতো।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রতন জানায়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতেও হল নেই। যার কারণে অধিক খরচ হয়। আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে টাইফয়েড, জন্ডিস এসব হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি তার ওপর এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ। কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা খরচ জোগান দেওয়া আমাদের অধিকাংশ পরিবারের সম্ভব হয়ে উঠে না। এসব দিক বিবেচনা করে স্বাস্থ্য বিমা চালু থাকা সবার জন্যই লাভজনক। স্বাস্থ্য বিমার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, আমরা একবার আমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু ইনস্যুরেন্স যারা করে, তারা নানা প্রতিবন্ধকতা দেখিয়েছিল। তাই সেই সময়ে কাজটা এগোতে পারেনি। এটি তো একটি ব্যাপক বিষয়, কতজন বিমায় থাকবে না থাকবে সবকিছু স্টাডি করে এটা করা যেতে পারে। করোনায় কতজন শিক্ষার্থী আক্রান্ত বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি তো নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। এত দিন ছাত্রকল্যাণ ডিঅর্গানাইজড ছিল, তাই এটা বলা যাচ্ছে না। এখন আমি এসে এই পরিসংখ্যানটা তৈরি করতেছি।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তো শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদেরই স্বাস্থ্য বিমা নেই। এগুলো চালু থাকা দরকার, এগুলো থাকলে বিপদের সময় কাজে লাগে। কিন্তু অনেকে আবার এসব বিষয়ে ইন্টারেস্টও দেখায় না। কবে ডাক্তার দেখাব, চিকিৎসা করাব, টাকা দেব মাসে মাসে? তবে ইনস্যুরেন্স তো এভাবেই হয়। বিপদ তো আর বলে আসে না। আমরা চিন্তাভাবনা করতেছি। আমাদের সাধারণ বিমা কর্মসূচি, প্রগতি এদের সঙ্গে কথা বলতেছি। দেখব কাদেরটা নিলে ভালো হয়, তবে চেষ্টা করব সবার জন্যই নেওয়ার।

উল্লেখ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনতে ডিনস কিমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে স্বাস্থ্য বিমা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close