প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের জের

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও ইহুদিবিদ্বেষ বেড়েছে

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধের জেরে গত চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও ইহুদিবিদ্বেষ-সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা-অপরাধ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

মার্কিন মুসলিমদের বৃহত্তম সংস্থা দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (কেয়ার) গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর- তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে মুসলিম ও ইসলামবিদ্বেষী ঘটনা ও অপরাধ-সংক্রান্ত ৩ হাজার ৫৭৮টি অভিযোগ এসেছে সংস্থাটির কাছে। চাকরিক্ষেত্রে বঞ্চনাবৈষম্য ও চাকরিচ্যুতি, ঘৃণামূলক অপরাধ-ঘটনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈষম্যমূলক নীতি, ঘটনাসহ আরো বিভিন্ন বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের বিবরণ রয়েছে এসব অভিযোগের মধ্যে।

‘অভিযোগের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পেয়েছি, ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৩ সালের এই সময়সীমায় শতকরা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম বিদ্বেষপূর্ণ ঘটনা ও অপরাধ বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ। এ সময়সীমার মধ্যে চাকরিক্ষেত্রে বৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে ৬৬২টি, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণামূলক আচরণ ও অপরাধ ঘটেছে অন্তত ৪৭২ বার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বঞ্চনাবৈষম্য সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে ৪৪৮ বার। এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে মুসলিমবিদ্বেষ এবং ফিলিস্তিনবিদ্বেষের ঢেউ চলছে,’ বিবৃতিতে বলেছে কেয়ার।

এদিকে, গাজা যুদ্ধের গত প্রায় চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমবিদ্বেষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাবও। দেশটিতে বসবাসকারী ইহুদিদের বৃহত্তম সংস্থা অ্যান্টি ডিফেমেশন লীগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে যত ইহুদিবিদ্বেষী তৎপরতা ও ঘটনা ঘটেছে, শতকরা হিসাবে তা গত ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়সীমার তুলনায় ৩৬০ শতাংশ বেশি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরো ২৪০ ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।

বস্তুত, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম এক দিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমানবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গত প্রায় সাড়ে চার মাসে গাজায় নিহত হয়েছে ২৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নিচে এখন ও চাপা পড়ে আছেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ।

গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির সাত দিনে ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনো তাদের হাতে আটক রয়েছেন।

এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলকে রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধের শেষে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল নামে স্বাধীন দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে

ওয়াশিংটন।

তবে ওয়াশিংটনের এই অবস্থানকে সমর্থন করছে না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। কিছুদিন আগে সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close