প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৩ এপ্রিল, ২০২১

প্রতিশোধের হুমকি তেহরানের

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় নাশকতা ইসরায়েলের

এক দিন আগেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির নতুন যন্ত্রপাতির তথ্য প্রকাশ করেছিল ইরান। তবে তাদের সেই সাফল্যে পানি ঢেলে দিয়েছে ইসরায়েল। গত রবিবার ইরানের ওই পারমাণবিক কেন্দ্রে নাশকতা চালিয়েছে ইহুদি রাষ্ট্রটি। ইরানের আণবিক প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তা আলি আকবর সালেহী এই ‘সন্ত্রাসী হামলার’ জন্য কাউকে নির্দিষ্ট করে দায়ী না করলেও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এটা ইসরায়েলি সাইবার হামলার ফল ছিল। খবর বিবিসি অনলাইনের। তেহরানের দক্ষিণে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে গত শনিবার সেন্ট্রিফিউজ সংযোজন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, যা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজে সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে রিঅ্যাক্টর ফুয়েলের পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রও তৈরি করা সম্ভব।

সেন্ট্রিফিউজ সংযোজন কার্যক্রমের উদ্বোধনের পরদিন গত রবিবার নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিদ্যুৎবিহীন হয়ে যায়। তবে এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েলের সতর্কবার্তার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে।

ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির ঘটনা এমন সময়ে ঘটাচ্ছে, যখন ২০১৫ সালের একটি পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার কথা বলছেন। ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির একটি লঙ্ঘন বলে দেখা হচ্ছে। কারণ ওই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান শুধু বিদ্যুৎ তৈরির জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন ও মজুদ করতে পারে।

ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র রেহরোজ কামালভান্দি বলেন, গত রবিবার সকালে পারমাণবিক কেন্দ্রের বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কে একটি ঘটনা ঘটেছে। তিনি যদিও সে সময় বিস্তারিত জানাননি। তবে ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এতে কোনো হতাহত বা লিকের ঘটনা ঘটেনি। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংস্থাটির প্রধান আলি আকবর সালেহীর একটি বিবৃতি পাঠ করা হয়। ওই বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘নাশকতামূলক হামলা’ এবং ‘পারমাণবিক সন্ত্রাস’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই জঘন্য ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে আহ্বান জানাচ্ছে যেন তারা পারমাণবিক সন্ত্রাসের বিষয়টিকে মোকাবিলা করে।’

তিনি বলেন, সব ধরনের অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে ইরানের। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার কথা শুনেছে তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

গত বছরের জুলাই মাসে নাতাঞ্জ কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন কেন্দ্রে আগুনের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনাকে অন্তর্ঘাতমূলক হামলা বলে দাবি করেছিল ইরান। তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের অবস্থান এবং এখানেই ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সাইটটি অবস্থিত।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে দেখা গেছে, কম মাত্রার ইউরেনিয়াম উৎপাদনের বিষয়ে ইরান সম্মত হয়েছিল যা পরমাণুভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য তেল উৎপাদন করবে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর গত বছর ইরান এই চুক্তি থেকে সরে আসে। এরপর নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে অ্যাডভান্সড সেন্ট্রিফিউজ দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close