জুবায়ের জামিল, রাবি

  ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

রাবির সাবেক তিন প্রক্টরসহ ছাত্রলীগের ৬১ নেতাকর্মী আসামি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক এক ছাত্রদল নেতাকে জিম্মি করে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় ও হামলার অভিযোগে তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আসাবুল হক ও দুজন সহকারী প্রক্টরসহ ছাত্রলীগের ৬১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মতিহার থানায় ৬৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরো ২০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। বিগত সময়ে ছাত্রদল নেতার কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মতিহার থানার ওসি মো. আব্দুল মালেক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাবি ছাত্রদলের এক নেতার পক্ষ থেকে এজাহার দেওয়া হয়েছে। এজাহারটি মামলায় নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। পরে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মামলার বাদী ছাত্রদল নেতা মো. তুষার শেখ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য। তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার আতাইকুলা গ্রামের বাসিন্দা। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ২২ মে দুপুর ১২টার দিকে এজাহারভুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র কলাভবনের সামনে বাদীর ওপর লোহার রড, বাঁশের লাঠি, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তার মোটরসাইকেল জিম্মি রেখে ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন। পরে এ ঘটনা সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তারা আবারও তাকে আটকে ১ লাখ টাকা আদায় করেন। এ ছাড়া জড়িত ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাসে নিয়মিত হলের সিটবাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল।

এজাহারে আরো বলা হয়, তৎকালীন রাবির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, সহকারী প্রক্টর ড. মাহফুজুর রহমান এবং ড. পুরনজিৎ মহালদারকে হামলা ও চাঁদার বিষয়টি অবহিত করলে তারা উল্টো বাদীকে শাসান। তারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলে অপারগতা প্রকাশ করেন। দায়িত্বে অবহেলা ও ছাত্রলীগের পক্ষপাতিত্ব করার জন্য তাদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মো. সাকিবুল হাসান বাকী (৩০), হাবিবুর রহমান (২৯), মুশফিক তাহমিদ তন্ময় (২৯), মো. হামিদুর রহমান হৃদয় (২১), মো. সোয়েব হাসান (২৩), রিদয় অধিকারী স্বচ্ছ (২৪), মো. গোলাম কিবরিয়া (৩০), মো. ফয়সাল আহমেদ রনু (৩১), মো. মুস্তাফিজুর রহমান বাবু (৩০), আসাদুল্লাহিল গালিব (২৮), প্রশান্ত কুমার বৃত্ত (২৯), মনু মোহন বাপ্পা (২৬), সাইফ করিম রূপম (২৯), সাদিকুল ইসলাম সাদিক, তানভীর ইশতিয়াক (২৭), ইসরাইল হোসেন, চিন্ময়, হাসিবুল হক শান্ত, মো. কাইয়ুম মিয়া (২৭), আবদুল্লাহ আল মামুন (২৭), মো. মেহেদী হাসান মিশু (২৮) ও মো. হাসান লাবন (২৮)।

আসামিদের মধ্যে আরো আছেন মো. আহমেদ সজীব (২৮), মো. শোভন কায়সার (২৬), মো. মিজানুর রহমান (২৮), মো. গুফরান গাজী (২৬), মো. রমিজুল ইসলাম রিমু, জন স্মীথ (২২), সৌমিত্র কর্মকার (২৪), মো. কাবিরুজ্জামান রুহুল, মো. আলফাত সায়েম জেমস, মো. খায়রুল আলম, মো. রাজিব হোসেন, ভাস্কার সাহা, মো. আরিফুল ইসলাম, মো. হামীম রেজা সাফায়েত, মো. শফিউর রহমান রাথিক, জয়ন্ত সরকার, মো. রাশেদ আলী, মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও অয়ন দাস।

এ ছাড়া আছেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, চিরন্তন চন্দ্র, মো. মোমিন ইসলাম, মো. শাকিল আহমেদ, সুভ্রদেব ঘোষ, মো. শামীম হোসেন, ফয়সাল শেখ, মো. নিয়াজ মোর্শেদ শুভ, মো. নাইম আলী, মো. প্রিন্স মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাহাত মাহমুদ, সৌরভ শেখ বন্ধন, মো. মোমিন, রাহাত খান সময় (২৩), মো. সোহান, মো. শাওন (২৪), মো. ইসমাইল, সুদীপ, মো. আরাফাত হোসেন, মো. মুশফিক, মো. আশিকুর রহমান অপুসহ (২২) অন্যরা।

জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘তালিকাভুক্ত সব আসামি ক্যাম্পাসের চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তারা সবাই শেখ হাসিনার লাঠিয়াল হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর মারধর, চাঁদাবাজি, সিটবাণিজ্য, মাদকসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল। বিগত সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে দানবে পরিণত হয়েছিল, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না করে তাদের স্বার্থ হাসিলে কাজ করেছে। এখন দেশ থেকে স্বৈরাচার পতন হয়েছে, তাই আমরা আশা করব নির্যাতিত নেতাকর্মীরা ন্যায়বিচার পাবেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close